ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের আচেহ প্রদেশে রোহিঙ্গাদের একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে দেশটির শত শত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদের ওপর আজ বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) এই হামলা চালানো হয়। মূলত রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য এই হামলা। খবর এএফপির।
প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানায়, গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে এ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এসেছে। সবশেষ আট বছরের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় এটি রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশ বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। নৌকা করেই তারা এখানে এসেছে। এর মধ্যে কিছু নৌকা থেকে রোহিঙ্গাদের নামতে দেয়নি স্থানীয়রা।
এএফপি বলছে, আচেহ প্রদেশের রাজধানী বান্দাতে একটি সরকারি হলে রাখা হয়েছিল ১৩৭ রোহিঙ্গাকে। আজ সেখানে ঢুকে পড়ে শত শত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের গায়ে জ্যাকেট ছিল, যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ছিল।
ওই সময়ের একটি ভিডিও এএফপির হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা রোহিঙ্গাদের স্থানীয় ইমিগ্রেশন কার্যালয়ে স্থানান্তরের দাবি জানান। আর এমনটি হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের নির্বাসিত করা যাবে।
ভিডিওতে শিক্ষার্থীদের স্লোগান দিতে শোনা যায়। তারা বলছিল, লাত্থি মেরে তাদের বের করে দাও ও আচেহ থেকে তাদের প্রত্যাখ্যান করো। এ সময় রোহিঙ্গাদের জিনিসপত্রে লাথি মারতেও দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
এদিকে, হামলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা। আর পুরুষেরা মাটির দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করছিল।
ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির একজন সাংবাদিক বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। পরে কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। মিয়ানমারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের সরিয়ে নিতে ট্রাক প্রস্তুত করে। পরে পুলিশের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের ট্রাকে উঠানো হয় এবং পাশেই থাকা একটি সরকারি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মন্তব্য দিতে রাজি হয়নি বান্দা পুলিশ কর্তৃপক্ষ। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বলেছে, ঘটনাটি শরণার্থীদের হতবাক ও মর্মাহত করেছে। এক বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর বলে, ‘উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাদের ও মানবিক কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।’ শরণার্থীদের ওপর আক্রমণ একটি বিচ্ছিন্ন কাজ নয় জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য, বিভ্রান্তি ও ঘৃণামূলক অনলাইনে প্রচার করা হয় এবং আজকের ঘটনা সেটির ফলাফল।
এএফপি জানিয়েছে, কয়েক দশকের দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ হয়েছে আচেহ প্রদেশে। সেখানে অনেক বাসিন্দা সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তবে, অন্য একটি পক্ষ বলছে, রোহিঙ্গারা তাদের দুর্লভ সম্পদ ব্যবহার করে এবং মাঝে মাঝে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।
২৩ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী খলিলুল্লাহ এএফপিকে বলেন, ‘যেসব রোহিঙ্গা এখানে এসেছে আমরা তাদের সঙ্গে একমত নয়। যার কারণে আমরা বিক্ষোভ করছি।’