আগুন লাগলেও যেভাবে বাঁচলেন জাপানের প্লেনের যাত্রীরা
গতকাল মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) ৩৭৯ জন আরোহীকে বহন করছিল এ৩৫০ মডেলের প্লেনটি। জাপানের রাজধানী টোকিওতে অবতরণের সময় অপর একটি প্লেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এ৩৫০ মডেলের প্লেনটির। এতে আগুন লেগে যায় আকাশযানটিতে। রানওয়েতে নামার পর বিমানটির গতির সঙ্গে বাড়ে আগুনও। ধোঁয়ায় ভরে যায় প্লেনের ভেতরের অংশ। এরপরেই সেখানে থাকা আরোহীদের বুঝতে বাকি থাকে না তাদের জীবন হুমকিতে। জীবন রক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তারা। তারা জানত, কয়েক সেকেন্ডেই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। খবর বিসিসির।
জাপান এয়ারলাইন্সের ৫১৬ নম্বর ফ্লাইটটির ভাগ্য বেশ ভালো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রীদের নিরাপদে বের করে আনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে প্রযুক্তি। তবে, সংঘর্ষ হওয়া আরেকটি প্লেনের ভাগ্য ভালো ছিল না। সংঘর্ষের পর ছোট কার্গো উড়োজাহাজটির পাঁচজন নিহত ও পাইলট গুরুতর আহত হয়েছেন। জাপানে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য যাচ্ছিল কার্গো প্লেনটি।
হেনেদা বিমানবন্দরে সন্ধ্যা ৭টা ৪৭ মিনিটে (গ্রিনিচ মান অনুযায়ী সময় ০৮:৪৭) কী ঘটেছিল, কীভাবে একই সময়ে রানওয়েতে দুটি প্লেন একসঙ্গে চলে এলো এ নিয়ে চলছে তদন্ত।
কীভাবে যাত্রীরা বেঁচে গেলেন, আর ঘটনার সময় তারা কেমন ছিলেন, কী পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলেন সবকিছুই ফুটে উঠেছে ভিডিও ও তাদের মুখের কথায়। ফ্লাইটটিতে থাকা ১৭ বছর বয়সী সুয়েদে অ্যান্টন বলেন, ‘ওই সময় এ৩৫০ এয়ারবাসের কেবিন পুরোপুরি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল। দোজখের মতো লাগছিল ওই জায়গাকে। প্লেনের মেঝের দিকে আমরা ঝুঁকে ছিলাম। যখন জরুরি দরজা খোলা হলো সবাই সেদিকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। আমারা কোথায় যাচ্ছিলাম বা কী হচ্ছিল তা বুঝতে পারিনি।’ এই দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে সক্ষম হয়েছে অ্যান্টনের বাবা, মা ও বোন।
প্লেনটিতে থাকা ৫৯ বছর বয়সী সাতোশি ইয়ামাকে বলেন, ‘সংঘর্ষের পর প্লেনটি একদিকে কাত হয়ে গিয়েছিল। আমরা একটি বড় ধাক্কা অনুভব করেছিলাম।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন যাত্রী বলেন, ‘প্লেনটি রানওয়েতে স্পর্শ করার সময় কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খাই। আমি জানালার বাইরে একটি স্ফুলিঙ্গ দেখেছি। পরক্ষণেই কেবিন ধোঁয়ায় ভরে যায়।’
প্লেনটি থামার পর কিছু যাত্রী ছবি তুলেছেন। সেসব ছবিতে দেখা যায়, প্লেনটির ইঞ্জিনে আগুন জ্বলছে। অন্য এক যাত্রী প্লেনের ভেতরের ভিডিও করেছেন। সেখানে দেখা যায়, উড়োজাহাজটির ভেতর ধোঁয়ায় পুরিপূর্ণ এবং সবাই চিৎকার করছে। একজন নারী যাত্রী জানান, অবতরণের পর আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় প্লেনটি অন্ধকার ছিল। জাপানের সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকেকে তিনি বলেন, ‘প্লেনের তাপমাত্রা অনেক ছিল। আমি বাঁচব না, এমনটি ধরে নিয়েছিলাম।’
অন্য এক যাত্রীর মতে, ‘শুধু একটি দরজা ব্যবহার করায় প্লেন থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা কঠিন হয়ে পড়ে। ওই সময় একটি ঘোষণা দেওয়া হয়। যেখানে বলা হয়, পেছনের ও মাঝখানের দরজা খোলা যাবে না।’
ঘটনার সময়ের কিছু ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, যাত্রীরা জরুরি দরজা দিয়ে লাফ দিয়ে নিচে নামছে। এরপরই দ্রুত সেখান থেকে দৌড় দেয় যাত্রীরা। কাউকে ব্যাগ বা অন্য কিছু ধরে রাখতে দেখা যায়নি।
অ্যাভিয়েশন বিশ্লেষক অ্যালেক্স মাচেরাস বিবিসিকে বলেন, ক্রুরা দুর্ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যবস্থা নিতে পেরেছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল কোন দরজাটি আগুন থেকে দূরে রয়েছে।