আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফল

Looks like you've blocked notifications!
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেসরকারিভাবে পাওয়া ফলাফল অনুযায়ী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের এই নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের ফলাফল ও পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের নামকরা গণমাধ্যমগুলো বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এবারের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থ মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে শেখ হাসিনা। দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫২টিরও বেশি আসনে জয় লাভ করে আরও পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। দেশটির প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বয়কটের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার দল ও মিত্ররা বাকি আসনগুলোতেও জয়ের পথে।

বিএনপি এই নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছে। বিএনপিনেতা ও সমর্থকদের গণগ্রেপ্তারের মধ্যেই রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

অপেক্ষকৃত কম প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতির কথা বলা হলেও সমালোচকরা বলেছেন, এই সংখ্যাও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪৫টি আসনে জয়লাভ করেছে। আজ সোমবার সরকারিভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কটের মধ্য দিয়ে গত নভেম্বরে যখন তফসিল ঘোষণা করা হয়, তখনই এর ফলাফল কী হবে তা অনুমেয় ছিল। আর সেই পথ ধরেই পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

এই নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থান নিয়ে তৈরি হয়েছে চমক। কোনো রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬৩টি আসনে জয়লাভ করেছে। আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২টি আসন। এই ফলাফলে দেশটির সংসদে বিরোধী দল খুঁজে পেতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে মাত্র ১১টি আসনে জয়লাভ করেছে।

নির্বাচনে জয়ী এই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে দলের আহ্বানে ডামি প্রার্থী হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের আবহ তৈরিতে কাজ করেছেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি এই নির্বাচন বয়কট করেছে। আর রোববারের একপাক্ষিক এই নির্বাচন ছিল শেখ হাসিনা আবারও ক্ষমতায় আসার একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চম মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বিরোধী দলের ভোট বর্জনের ভেতর দিয়ে। এই বিরোধী দলকে তিনি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আজ সোমবার (৮ জানুয়ারি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের একজন মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কার্যকর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়নি। তবে, আইনসভাকে একদলীয় প্রতিষ্ঠান বলা এড়াতে আপাত প্রচেষ্টা হিসেবে দলটি কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেয়নি।

এদিকে, গণগ্রেপ্তারে প্রায় অকার্যকর হয়ে যাওয়া বিরোধী দল বিএনপি এবং আরও কিছু রাজনৈতিক দল সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এই নির্বাচনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দলগুলো। আজ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হবে, যেখানে দেখা যাচ্ছে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ প্রায় দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করেছে। পার্লামেন্টের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২২০টির বেশি আসন পেয়েছে দলটি।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান বিরোধী দলের বয়কটের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম ভোটার উপস্থিতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অর্জন করে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে, দেশবাসীকে রোববারের নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়ে দুদিনের ধর্মঘট ডেকেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল দলটি। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা। দলটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

২০১৮ সালে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এবারের নির্বাচনে  ভোট প্রয়োগ করেছেন প্রায় ৪০ শতাংশ। প্রায় ১২ কোটি ভোটারের এই নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে অংশ নিয়েছেন প্রায় দুই হাজার প্রার্থী। পার্লামেন্টের ৩০০টি আসনের মধ্যে একটি আসনে এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে সেখানে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।