গাজায় গণহত্যা বন্ধ ও সাহায্য পাঠানোর পথ করে দিতে ইসরায়েলকে আইসিজের নির্দেশ

Looks like you've blocked notifications!
অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিনিরা টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের শুনানি দেখেন। ছবি : এএফপি

গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক তৎপরতা বন্ধ এবং সেখানে সাহায্য পণ্য পাঠানোর পথ তৈরি করে দিতে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। খবর এএফপির।  

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দেওয়া এক আদেশে জাতিসংঘের এই শীর্ষ আদালত জরুরি ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সাহায্য পণ্য পাঠাতে সহায়তা করতে বলেছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার মাধ্যমে যে যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, তার রেশ ধরে নির্বিচার বোমা হামলার শিকার গাজার লাখ লাখ নাগরিক।

তবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এই প্রাথমিক রায়কে প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই মামলা আপত্তিকর। অন্যদিকে, গাজার হামাস শাসকরা আইসিজের এই রুলিং সম্পর্কে বলেছেন, এটি ইসরায়েলকে একঘরে করতে এবং গাজায় সংঘটিত অপরাধকে প্রকাশ করতে অবদান রাখবে।

এর পরপরই ফিলিস্তিনের এই সশস্ত্র সংগঠনটি একটি ভিডিও প্রকাশ করে। এতে তিনজন নারী পণবন্দিকে দেখানো হয়। এদের মধ্যে দুজন ইসরায়েলি সেনা সদস্য বলে দাবি করে হামাস।

এদিকে এই রুলিংয়ের পরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, তারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এর আগে হামলার অভিযোগ আনে ইসরায়েল।

নেদারল্যান্ডসের দি হেগ ভিত্তিক জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত গত চার মাস ধরে চলমান যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে। আইসিজে বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই গণহত্যা কনভেনশনের আওতার মধ্যে পড়ে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি অব্যাহতভাবে সমর্থন করে আসতে থাকা দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সালে প্রণীত জাতিসংঘ গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগে এই মামলা দায়ের করে। কনভেনশনটি প্রণয়ন করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও হলোকাস্টের ভয়াবহতার পর।

যদিও রায় বাস্তবায়নে আইসিজের বলপ্রয়োগের কোনো কাঠামো নেই, কিন্তু তারপরও এই রুলিয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা তার শীর্ষ করমকর্তাদের সঙ্গে তা উদযাপন করেছেন। এই সিদ্ধান্ত যুদ্ধ থামাতে একটি নতুন কূটনৈতিক বাঁক নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন রামাফোসা। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, স্বঘোষিত গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসন প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দেশ ইসরায়েল এই আদেশকে মেনে চলবে।’

আরও পড়ুন

গাজায় গণহত্যার বিষয়ে আজ প্রাথমিক রায় দেবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত

এদিকে রুলিংয়ের পরপর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আইসিজের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা কেবল মিথ্যাই নয়, এটা আপত্তিকর এবং সব ক্ষেত্রের বুদ্ধিমান মানুষের এটা প্রত্যাখ্যান করা উচিত।’

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গালান্ত বলেন, ইসরায়েলকে নৈতিকতার বিষয়ে বক্তৃতা দেওয়ার দরকার নেই।

ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র আবারও বলেছে, গণহত্যার এই অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’। তবে আইসিজের সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে মনে করা করা হচ্ছে, এই রুলিংয়ে প্রমাণিত হলো কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্যোগকে ফিলিস্তিনিরা স্বাগত জানালেও প্রাথমিক রায়ের নিয়ে তাদের একাধারে গর্ববোধ ও হতাশা রয়েছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাসিন্দা মাইস শাবান বলেন, ‘আমরা মনে করি, গাজায় মানবিক সহায়তা তৎপরতার পথকে সুগম করার পাশাপাশি আইসিজে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে পারত।’