সামরিক বাহিনীতে যোগদান এড়াতে দেশ ছাড়ছেন মিয়ানমারের যুবকেরা

Looks like you've blocked notifications!
মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ছবি : এএফপি

মিয়ানমারের একটি পাসপোর্ট অফিসের সামনে কয়েকদিন আগে প্রচণ্ড ভিড়ে পদদলিত হয়ে মারা যায় দুজন। এ ছাড়া দেশটিতে থাকা বিভিন্ন দূতাবাসের সামনে ভিসাপ্রার্থীদের অন্তহীন দীর্ঘ সারি বলে দেয়, জান্তা সরকারের বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার ঘোষণাটিতে কী প্রভাব পড়েছে দেশটির যুবকদের মধ্যে।

মিয়ানমারের সামরিক সরকার তাদের শাসনক্ষমতার বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিরোধ যোদ্ধা বা বিদ্রোহীদের কাছে দেশের বেশ কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণও তারা হারিয়েছে এবং হারাতে যাচ্ছে। খবর বিবিসির।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে বর্তমান সামরিক সরকার। ক্ষমতায় এসেই দেশটির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জেলে পাঠায় তারা। পাশাপাশি পুরো দেশকে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দেয়। সংঘাতে দেশটিতে প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। জাতিসংঘের হিসাবে ২৬ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে।

যে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জানাতে সবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল দেশের তরুণ সমাজ। এখন তাদেরকেই বলা হচ্ছে, বিদ্রোহ দমনে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে। অনেকে মনে করছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সামরিক বাহিনী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে যেভাবে নাস্তানাবুদ হচ্ছে এবং নতুন নতুন এলাকায় সরকারবিরোধী পক্ষগুলো জান্তা সরকারকে বিপদে ফেলতে যেভাবে একতাবদ্ধ হচ্ছে, তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে যোগদানের ঘোষণাটি এসেছে। আর এই ঘোষণার পরপরই দলে দলে দেশ ছাড়তে চাইছে দেশের যুবকরা।

মিয়ানমারে বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বাহিনীতে যোগদানের বিষয়ে আইন প্রবর্তন করা হয় ২০১০ সালে। তবে গত ১০ ফেব্রুয়ারির আগে তার প্রয়োগ হয়নি। ওই আইনে দেশের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের বাধ্যতামূলকভাবে দুই বছর সামরিক বাহিনীতে সেবা প্রদান করতে হয়। সেই হিসাবে পাঁচ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশটির এক-চতুর্থাংশ লোক সামরিক বাহিনীতে যোগদানের আওতায় পড়েছে। তবে এই মুহূর্তে নারী সৈন্য নিচ্ছে না জান্তা সরকার।

প্রাথমিকভাবে আগামী মধ্য এপ্রিলে মিয়ানমারের নববর্ষকে সামনে রেখে পাঁচ হাজার নতুন সেনা নিয়োগ দেবে জান্তা সরকার। আর এতেই দেশটির যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অনীহা। এসব যুবকের বেশির ভাগেরই পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়েছে সামরিক শাসন ও কোভিড অতিমারির কারণে। এ ছাড়া ২০২১ সালে বিরোধী জোটকে সমর্থনের দায়ে দেশটির এক লাখ ৪৫ হাজার শিক্ষকের চাকরি স্থগিত করে দিয়েছিল জান্তা সরকার। তাছাড়া সংঘাত ও বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই এসব যুবকের প্রতিক্রিয়াটাও অন্যরকম। বাধ্যতামূলক সেনানিয়োগের ঘোষণার প্রতিবাদে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানাচ্ছেন, সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া এড়াতে তারা সন্ন্যাসী জীবনযাপন করবেন বা আগেই বিয়ে করে ফেলবেন।

অবস্থাসম্পন্ন পরিবারগুলো অবশ্য দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছে। আর এক্ষেত্রে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরই তাদের প্রথম পছন্দ। কেউ কেউ আইসল্যান্ডে চলে যাওয়ারও চিন্তা-ভাবনা করছেন স্থায়ীভাবে থেকে যেতে। ছেলেমেয়েদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার বয়স পার হলে দেশে ফেরার ইচ্ছা তাদের। এমনকি, সামরিক বাহিনীতে যোগদান এড়াতে অনেক যুবক প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের যুবকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।