পশ্চিমবঙ্গে এবার সাংবাদিকের বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি

Looks like you've blocked notifications!

এবিপি আনন্দের সাংবাদিক সুমন দে-র বিরুদ্ধে এফআইআর করার পর একই প্রতিষ্ঠানের প্রকাশ সিনহার বাড়িতে তল্লাশি চালালো পুলিশ। প্রকাশের বাড়ি নরেন্দ্রপুরে। সাতসকালে বিশাল পুলিশ বাহিনী লাঠি, কাঁদানে গ্যাস-সহ সাংবাদিকের বাড়িতে যান। ওই সাতসকালে পুলিশের যাওয়ার কারণ, তদন্তের স্বার্থে তল্লাশি করা।

পুলিশের দাবি, ২৪ ফেব্রুয়ারি, থানায় প্রতারণা ও জলাভূমি সংরক্ষণ নিয়ে একটা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তারই তদন্তের কাজে তারা গিয়েছিল। কয়েকজন ব্যক্তি ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ফ্ল্যাট পাননি। তাই তারা সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়েই গিয়েছিলেন।

তিনতলা বাড়ির প্রতিটি ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখা হয়। ঘরগুলোতে জিনিসপত্র ছড়িয়ে যায়। সাংবাদিকের মেয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। সে এত পুলিশ দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে যায়। প্রকাশের স্ত্রী শ্বেতা সিনহা জানিয়েছেন, ‘মেয়ে দুইবার মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পুলিশ যখন এসেছে, তখন প্রকাশ হাঁটতে গেছিলেন।’

শ্বেতা ও মুকেশের দাদা প্রকাশ সিনহা জানিয়েছেন, ‘পুলিশ ল্যাপটপ ও পেন ড্রাইভ থেকে ডেটা ট্রান্সফার করে নিয়ে যায়।’

পাঁচঘণ্টা ধরে তল্লাশির পর পুলিশ চলে যায়।

সুমন দে-র বিরুদ্ধে এফআইআর

এর আগে এবিপি আনন্দের সাংবাদিক সুমন দে-র বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিল পুলিশ। সন্দেশখালি নিয়ে রাত আটটায় একটা খবর প্রচারিত হয়েছিল। পরে রাতেই ওই খবর নিয়ে ভুলস্বীকার করে নতুন সংবাদ দেওয়া হয়। এরপরও এফআইআর ও তদন্ত করছিল পুলিশ। হাইকোর্ট তাতে স্থগিতাদেশ দেয়।

বিচারপতি জানান, ‘কেউ যদি অবস্থান স্পষ্ট করে বারবার ক্ষমা চান, তাহলে বুঝতে হবে, কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। অযথা কেউ কেন তদন্তের মুখোমুখি হবেন।’

সাংবাদিক সন্তু পান গ্রেপ্তার, তিন দিন পর জামিন

দিন দশেক আগে রিপাবলিক বাংলার সাংবাদিক সন্তু পানকে সন্দেশখালি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি সন্দেশখালি থেকে লাইভ সম্প্রচারে ছিলেন। সেই অবস্থায় তাকে টেনেহিঁচড়ে পুলিশ নিয়ে যায়। একটি টোটোতে বসিয়ে তাকে থানায় নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

দিন তিনেক পরে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।  তখনো পুলিশের বিরুদ্ধে সাংবাদিক নিগ্রহের এবং সংবাদমাধ্যমের মুখ ভয় দেখিয়ে বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছিল। জাতীয় ও কলকাতা প্রেস ক্লাব ঘটনার নিন্দা করেছিল।

কিন্তু তার দিন দশেক পরে প্রকাশ সিনহার বাড়িতে যেভাবে তল্লাশি করা হয়েছে, তাতে পুলিশের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে।

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া

রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ সিনহার বাড়িতে গিয়ে বলেন, ‘পুলিশ যেভাবে সব লণ্ডভণ্ড করে তল্লাশি করেছে তা জঙ্গিদের ক্ষেত্রেও করে না। তারা কি শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি করেছে? প্রকাশ কি আইএস করে না কি হিজবুল মুজাহিদীন করে, নাকি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য?

শুভেন্দু বলেছেন, ‘মেয়েটার ফিজিক্সের পরীক্ষা আছে, কী করে দিয়ে গেছে ঘরটা একবার দেখুন। এরা কি মানুষ?’

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এবিপি আনন্দকে বলেছেন, ‘সাংবাদিককে তো পুলিশ ডেকে পাঠাতে পারত। দুই জন অফিসার তার সঙ্গে কথা বলে নিতে পারত। তা না করে বাড়িতে গিয়ে লণ্ডভণ্ড করার দরকার ছিল না। মেয়ের সামনে পরীক্ষা আছে এটাও মাথায় রাখতে হবে। এটা আসলে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা।’

আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকি বলেছেন, ‘কখনো শাসক-আশ্রিত গুণ্ডারা বুম-ক্যামেরা ভাঙছে। কখনো পুলিশকে দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারতে এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

কংগ্রেস নেতা মনোজ চক্রবর্তী এই ঘটনার নিন্দা করেছেন।

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবিপি আনন্দকে বলেছেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের অতি-সক্রিয়তা দেখা যায়। সেখানে অতি সতর্কতাও দেখানো উচিত। নাহলে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে আদালত বলে দিয়েছিল, পুরো মামলাটাই মিথ্যা।’

সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘আমি কলকাতা প্রেসক্লাবের কাছে ঘটনাটা জানতে চেয়েছি। তাদের কাছ থেকে বিষয়টি আগে জানবো। তবে যেটুকু দেখেছি ও পড়েছি, তাতে বাড়ির লোকেদের এইরকম হেনস্তা মেনে নেওয়া যায় না। তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো অভিযোগ নেই।’

সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে এখন সাতসকালে পুলিশ যাওয়ার ঘটনা বারবার ঘটছে। আসলে সব সরকার একইভাবে চলছে। সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে, গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে তারা একইরকমভাবে ব্যবস্থা নিতে চাইছে।’