ফ্রান্সের চমক কে এই জর্ডান বারডেলা?
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/07/01/jordan_thamb.jpg)
ফ্রান্সের জাতীয় নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকে যার নাম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে তিনি ডানপন্থি ন্যাশনাল র্যালি পার্টির নেতা জর্ডান বারডেলা।
নিজ দেশে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থিদের কাছে ধরাশায়ী হয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আগাম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা ম্যাক্রোঁর ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরও হতবাক করে দেয়। কারণ, ২০২৭ সালের আগে ফ্রান্সে কোনো নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল না। ম্যাক্রোঁর ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রোববার (৩০ জুন) অনুষ্ঠিত হয়েছে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ। দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৭ জুলাই।
প্রথম দফায় ভোটের ফলাফল দেখে ফ্রান্সের ভবিষ্যত কি হতে যাচ্ছে তা কিছুটা অনুমান করা যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জনগণের কাছে ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে ডানপন্থিদের উত্থানের মাধ্যমে। ডানপন্থিদের উত্থান ভয় সৃষ্টি করছে ম্যাক্রোঁ শিবিরে। সর্বশেষ কে হবে প্রধানমন্ত্রী- এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য সাপে-নেউলের মতো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ডানপন্থি ও মধ্যপন্থিদের মাঝে। খবর আলজাজিরার।
ফ্রান্সের পরবর্তী সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী কে এই জর্ডান বারডেলা?
জর্ডান বারডেলা ফ্রান্সের মানুষের কাছে পরিচিত হাসিমুখের এক তরুণ হিসেবে। তিনি যুবক-যুবতীদের সাথে যুক্ত হতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে প্রতিনিয়ত ভিডিও দিচ্ছেন। টিকটকে তার ১৩ লাখ ফলোয়ার রয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে থাকা ডানপন্থি নেতা বারডেলা সমর্থকদের কাছে অসাধারণ মানুষ হওয়ার পাশাপাশি একজন সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনীতিবিদ হিসেবেও পরিচিত।
২৮ বছর বয়সী চরম-ডানপন্থি আরএন পার্টির এই নেতা দলের আরেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ মেরিনা লি পেনের সাথে ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনি জরিপে দেখা গেছে, আরএন পার্টি ভোটের এক-তৃতীয়াংশ পাবে। কিন্তু বারডেলার সুন্দর নির্বাচনি প্রচারণার জন্য আশা করা হচ্ছে আরও বেশি ভোট তিনি পাবেন, যা তাকে জোটমুক্ত সরকার গঠন করার জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রদান করবে। বার্ডেলা বারবার প্রচারণায় ফ্রান্স এবং ফ্রান্সের ঐতিহ্যের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গত সোমবার প্রকাশিত আরএন পার্টির ইশতেহারে তিনি তার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, অনিবন্ধিত অভিবাসন রোধ করা, জ্বালানি কর কমানোর মাধ্যমে ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং বিদ্যালয়গুলোর উপর থেকে কর্তৃত্বপূর্ণ আচরণ কমানোর বিষয়গুলো। ফ্রান্সের ডানপন্থি আরএন পার্টিকে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দেখা হয়।
এই নির্বাচনে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে পার্লামেন্টে অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে সাত বছরের ক্ষমতা থেকে সরানোর একমাত্র বিকল্প হিসেবে বারডেলাকেই দেখছেন। আর বারডেলা এ সপ্তাহে তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা প্রস্তুত।
জর্ডান বারডেলা প্যারিসের শহরতলি সাইন-সেন্ট-ডেনিসের ব্যানিলিউতে বেড়ে ওঠেন। ১৯৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করা বারডেলার উত্থান অধিকার সচেতনতা ও অধিকার আদায় আন্দোলনের মাধ্যমে।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2024/07/01/jordan_iner.jpg)
বারডেলা নিজের শিক্ষাজীবন শুরু করেন একটি আধা-সরকারী ক্যাথলিক স্কুলে। তার বাবা অলিভিয়ার ইতালিয়ান ও মা আলজেরীয় বংশোদ্ভূত। তার বাবা পানি বাজারজাতের ব্যবসা করতেন। বারডেলা যখন ছোট ছিলেন ভোরের আলো ফুটবার আগে তার বাবা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়তেন।
বারডেলার জীবনী লেখা সাংবাদিক পিয়েরে স্টিফেন ফোর্টের বর্ণনা অনুসারে লি পেনের পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য তিন সপ্তাহ ধরে মায়ের কাছে অনুমতি পাওয়ার আশায় ঘুরে ছিলেন তিনি। অবশেষে ২০১২ সালে ১৬ বছর বয়সে বার্ডেলা আরএন পার্টিতে যোগ দেন।
বার্ডেলা ২০১৪ সালে সেন্ট-ডেনিসের দলীয় প্রতিনিধি হন। তার দলের কমরেড এবং স্থানীয় কাউন্সিলর ম্যাক্সেন্স বুট্টি যখন প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার ঘোষণা করেন তখন বারডেলা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। আর এর মাধ্যমেই প্রথম জনসম্মুখে আসেন তিনি।
বার্ডেলা লি পেনের বন্ধু ফ্রেডেরিক চ্যাটিলনের মেয়ে কেরিডওয়েন চ্যাটিলনের সাথে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বারডেলা লি পেনের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ২১ বছর বয়সে দলের মুখপাত্র নিযুক্ত হন। ২০১৯ সালে লি পেন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে দলের নেতৃত্ব বার্ডেলার হাতে দেন এবং আরএন পার্টি বিপুল ভোটে সে নির্বাচনে জয় লাভ করে। বার্ডেলার ২০২২ সালে আরএন পার্টির প্রেসিডেন্ট হন এবং ২০২৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।