ষষ্ঠ দিনে আমরণ অনশন, গুরুতর অসুস্থ অনিকেত
ষষ্ঠদিনে পা রাখল জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন। কলকাতার ধর্মতলায় সাতজন এবং উত্তরবঙ্গে দুজন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে বসেছেন। এর মধ্যে অনিকেত মাহাতোকে গত বুধবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। যদিও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনিকেত হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি বলে জানিয়েছেন তার সতীর্থরা।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর থেকেই ক্রমশ শরীর খারাপ হতে থাকে অনিকেতের। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় টান ধরতে শুরু করে। বেড়ে যায় পালসের গতি। লিভার এবং কিডনিতে সমস্যা হতে শুরু করে। কিন্তু অনিকেত হাসপাতালে যেতে চাননি। যদিও তার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স এনে রাখা হয় অনশন মঞ্চের সামনে।
রাতে অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে আরজি করের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অনিকেতের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। শরীরের কোষে জলের পরিমাণ কমে গেছে। লিভার এবং কিডনিতে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সকালে অনিকেতের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি চিকিৎসক বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অনিকেতের পাশাপাশি আরেক অনশনকারী স্নিগ্ধার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু স্নিগ্ধা সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে যেতে চাননি।
অনিকেতের সতীর্থরা এখনও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। অনিকেত অসুস্থ হয়ে পড়লেও তারা অনশন থেকে উঠতে রাজি হননি। বস্তুত, বৃহস্পতিবার সিনিয়র চিকিৎসকেরাও আন্দোলন মঞ্চে এসে তাদের কাছে অনশন তুলে নেওয়ার আর্জি জানান। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা তাতে রাজি হননি। অনশন তোলার আবেদন জানানো হয়েছে নাগরিক সমাজের তরফেও। পাশাপাশি নাগরিক সমাজ চিঠি দিয়েছে সরকারপক্ষকেও। তাতে বলা হয়েছে, জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আবার আলোচনায় বসার জন্য। বৃহস্পতিবার দিনভর অনশন মঞ্চে এসেছেন বিশিষ্ট মানুষেরা। এসেছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন
নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। বুধবার প্যান্ডেলে স্লোগান দেওয়ার অপরাধে যে নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, শুক্রবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হয়। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্থানে অশান্তি তৈরির মামলা দায়ের করেছে। এই ধারা জামিন অযোগ্য। আদালত ওই ব্যক্তিদের সাতদিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, প্যান্ডেলের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে স্লোগান দেওয়া কী অপরাধ? পুলিশ তাদের আটক করতে পারতো, কিন্তু কেন তাদের বিরুদ্ধে এত ভয়ংকর ধারায় মামলা করা হলো? এদিন আদালত চত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। সেখানে দাঁড়িয়েও তারা স্লোগান দেন। আদালত চত্বরে এসেছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া এক ছাত্রের বাবা। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি ছেলের জন্য গর্বিত। এতটুকু ভয় বা চিন্তা হচ্ছে না।’
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার পুলিশ একটি নোটিস পাঠায় আন্দোলনকারীদের। সেখানে বলা হয়েছে, ধর্মতলায় যে মঞ্চ তৈরি করা হয়ছে তা বেআইনি। যারা অনশন করছে, তাদের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। তা-ই দ্রুত এই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হোক। বস্তুত, বৃহস্পতিবারও অভয়া পরিক্রমায় বাধা দেয় পুলিশ। লাগিয়ে দেওয়া হয় ব্যারিকেড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনতার চাপে সেই ব্যারিকেড সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় তারা।
ডাক্তারদের চিঠি
বৃহস্পতিবার সিনিয়র চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের সংগঠন, আইএমএ এবং ফেমা আছে। ফেমার চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের কারও যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য দায়ী থাকবে সরকার। সে ক্ষেত্রে গোটা রাজ্যে সমস্ত চিকিৎসকেরা সব কাজ বন্ধ করে দেবেন। দ্রুত এই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য সরকারকে সদর্থক ভূমিকা নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। ডাক্তারদেরঅন্য সংগঠনগুলোও সরকারকে আবার আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। একই আহ্বান জানানো হয়েছে নাগরিক সমাজের তরফ থেকেও।
এদিকে শুক্রবারও একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারীরা। সরকারও অনশন মঞ্চের কাছে পুলিশ মোতায়েন করেছে। রাখা হয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। যদিও আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা সরকারের দেওয়া অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করবেন না।