যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে রাজ্যগুলো ফলাফলে গড়বে পার্থক্য
অনেক আগেই বিশ্বমোড়ল দেশগুলোর একটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু করেছে অপারপার দেশগুলো। দেশটির নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগও উঠেছে রাশিয়া, চীন ও ইরানের বিরুদ্ধে। যদিও তা উড়িয়ে দিয়েছে দেশগুলো। তবে, দৃষ্টি যে সেদিকে আছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর)। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে এই নির্বাচন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে কোনো কোনো অঞ্চলে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আগাম ভোটগ্রহণ। এই নির্বাচনে কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প—কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তা নির্ধারিত হতে পারে কিছু রাজ্যের ফলাফলে। এগুলো ‘সুইং স্টেট’ বা দোদুল্যমান রাজ্য হিসেবে পরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্য। প্রতিটির রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। কোনো রাজ্যে যে প্রার্থী জয়ী হবেন, তিনি সব কটি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন। ব্যতিক্রম শুধু মেইন ও নেব্রাস্ক অঙ্গরাজ্য। বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্যেই কে এগিয়ে, সেটি সমর্থনের ভিত্তিতে ও জরিপের মাধ্যম আগেভাগে ধারণা করা যায়। কিন্তু কয়েকটি অঙ্গরাজ্য আছে যেগুলোতে অনুমান করা কঠিন। ‘সুইং স্টেট’ নামে পরিচিত এসব অঙ্গরাজ্যের দিকে এখন দুই প্রার্থীর শিবিরের মনোযোগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘সুইং স্টেট’–এর পরিবর্তন হয়েছে। জনসংখ্যা বা বিভিন্ন ইস্যুর কারণে ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গরাজ্য এমন সুইং স্টেটের তালিকায় এসেছে। চলতি বছর গর্ভপাতের অধিকারের মতো অভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি রাজ্যগুলোর নিজস্ব ইস্যুও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেখে নিন কোন রাজ্যগুলো এবার ‘সুইং স্টেট’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নেভাদা
দক্ষিণ সীমান্তবর্তী রাজ্য নেভাদার জন্যও অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। এখানকার জনসংখ্যার এক–তৃতীয়াংশ হিস্পানিক। রাজ্যটি অতিমাত্রায় পর্যটননির্ভর। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্য সুইং স্টেটের মধ্যে নেভাদার অর্থনীতিই সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে। একই সঙ্গে সব রাজ্যের মধ্যে নেভাদাতে বেকারত্বের হারও সর্বোচ্চ। ২০২০ সালের নির্বাচনে নেভাদায় জয়ে পেয়েছিলেন বাইডেন। এখানে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ছয়টি।
উইসকনসিন
গত দুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়া অঙ্গরাজ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল উইসকনসিন। প্রতিবারই মাত্র ২৫ হাজারের কম ভোটের ব্যবধানে প্রেসিডেন্ট বেছে নিয়েছেন এখানকার ভোটাররা। এখানকার প্রতিটি ভোটই তাই পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ১০। ২০২০ সালে সামান্য ব্যবধানে এই অঙ্গরাজ্যে জিতেছিলেন ট্রাম্প।
অ্যারিজোনা
মেক্সিকো সীমান্তবর্তী অ্যারিজোনা রাজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অনিয়মিত অভিবাসন। বাইডেন প্রশাসনে এই সীমান্তের অভিবাসন সংকট সমাধানের দায়িত্ব ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কাঁধে। অনেকে মনে করেন তিনি এই কাজে ব্যর্থ হয়েছেন। ট্রাম্প এ বিষয়ে হ্যারিসকে আক্রমণ করার সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করছেন না। অ্যারিজোনার ভোটারদের এক–তৃতীয়াংশ হিস্পানিক। এই রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোট ১১টি। গতবার এই রাজ্যে বাইডেন জিতেছিলেন।
মিশিগান
ফোর্ড, জেনারেল মোটরস ও ক্রাইসলামের মতো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা মিশিগান। গত নির্বাচনে বাইডেন এই রাজ্যে জয়লাভ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি রুখতে বিপুল পরিমাণ করারোপ করেন। রাজ্যের ভোটারদের উল্লেখযোগ্য অংশ আরব–আমেরিকান। এবার গাজা যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে তাদের সমর্থন আদায়ের চ্যালেঞ্জ কমলা হ্যারিসের সামনে। এই রাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ১৫টি।
জর্জিয়া
১৯৯২ সালের পর গত নির্বাচনেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে জর্জিয়ায় জয় পেয়েছিলেন জো বাইডেন। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র দুই দশমিক দুই শতাংশ।
এই অঙ্গরাজ্যের ৩৩ শতাংশ ভোটার কৃষ্ণাঙ্গ, যা কমলা হ্যারিসের পক্ষে যেতে পারে। ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় এই রাজ্যের নির্বাচনের ফল পাল্টানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। যার বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। এই রাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ১৬টি।
নর্থ ক্যারোলাইনা
সুইং স্টেটের তালিকায় নবীনতম রাজ্য নর্থ ক্যারোলাইনা। গত জুলাইয়ে বাইডেন সরে দাঁড়ানোর আগপর্যন্ত ট্রাম্প সেখানে এগিয়ে ছিলেন। যদিও পরে কমলা হ্যারিস সেই ব্যবধান কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। গত ১১টি নির্বাচনে এখান থেকে মাত্র একবার জিতেছেন ডেমোক্র্যাটরা। গত তিন দশকে এখানকার জনসংখ্যায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। শ্বেতাঙ্গদের হার ৭৫ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২০ সালে ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে রাজ্যটিতে জয়ী হন ট্রাম্প।
পেনসিলভানিয়া
অন্য রাজ্যের তুলনায় পেনসিলভানিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চাপ বেশি। প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশনে ফ্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহারের পর টেক্সাসের পর এটি সবচেয়ে বড় উৎপাদানকারী রাজ্যে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্পের অবস্থান ফ্র্যাকিংয়ের পক্ষে। কমলা শুরুতে এর বিপক্ষে থাকলেও এখন বিকল্প ব্যবস্থায় খোলা রাখার পক্ষে। ১০ সেপ্টেম্বর এই রাজ্যে বিতর্কে মুখোমুখি হন ট্র্যাম্প–কমলা। এখানে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ১৯টি।