প্রচারণার শেষ মুহূর্তেও কমলা-ট্রাম্পের বাগযুদ্ধ, নানা প্রতিশ্রুতি
ডেমোক্র্যাটিক কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগেরদিন গতকাল সোমবারের (৪ নভেম্বর) শেষ কয়েক ঘণ্টাও বাগযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। এবারের নির্বাচনে মার্কিনিরা হয় দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট বাছাই করবেন অথবা রিপাবলিকানদের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেবেন।
নির্বাচনি জরিপগুলোতে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন খুব কাছাকাছি। ফলে, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাদের প্রচারের শেষ দিন অত্যন্ত টানটান সমর্থন পাওয়া সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যস্ত থেকেছেন।
মিশিগানের গ্র্যান্ড র্যাপিডসে চূড়ান্ত প্রচারণার আগে ট্রাম্প উত্তর ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভানিয়ায় সমাবেশ করেছেন। কমলা হ্যারিস পেনসিলভেনিয়ায় সর্বাত্মক প্রচারণা চালান।
পেনসিলভেনিয়ায় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতির জন্য অবৈধ অভিবাসীদের দায়ী করেন। কমলা হ্যারিসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘যদি সে কোনোভাবে জয়ী হয়, তাহলে নির্বাচনের পরের দিনই সীমানা খুলে দেবে।’
অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্প-সমর্থিত গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তার জোরালো অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি পেনসিলভানিয়ার অ্যালেনটাউনে ভোটারদের বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি ভিন্ন মতের লোকদের কথা শুনবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে ভালবাসি।’
উভয় প্রার্থীই বলেছেন, বিপুল আগাম ভোট পড়ায় তারা উত্সাহিত হয়েছেন। আট কোটির বেশি লোক আগাম ভোট দিয়েছেন।
সুপারস্টার টেলর সুইফট ভোটের আগে কমলা হ্যারিসের সমর্থনে তার ২৮ কোটি ৩০ লাখ অনুসারীর উদ্দেশে পোস্ট করেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, মঙ্গলবারই ভোট দেওয়ার চূড়ান্ত সুযোগ।
এ নির্বাচনে প্রধান কোনো দলের মনোনীত সবচেয়ে বয়স্ক প্রার্থী ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। কিন্তু ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও এবং চার বছর আগে কংগ্রেসে তার সমর্থকদের হিংসাত্মক হামলার ঘটনার পরেও এবারের নির্বাচনে তিনি জোরালো সমর্থনই পেতে যাচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
জরিপগুলোর ফলাফলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চার বছর শেষে দেশের অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট। প্রচারাভিযানের শেষ দুই সপ্তাহে কমলা হ্যারিস ভোটারদের সতর্কবার্তা দিতে দেখা গেছে যে, ট্রাম্প একজন চরম ও অস্থির ব্যক্তিত্ব, যিনি আমেরিকান গণতন্ত্রকে পাল্টে ফেলতে চাইছেন।
তবে প্রথমবারের মতো ভোটার হওয়া মিশিগানের ১৯ বছর বয়সী ইথান ওয়েলস বলেন, ‘বাইডেন অনেক অবৈধ অভিবাসীকে প্রবেশ করতে দিয়েছেন এবং তারা আমাদের নিজেদের লোকদের হত্যা ও ধর্ষণ করছে। যখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন কেউ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঝামেলা করতে পারেনি।’
জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন হঠাৎ করে নির্বাচনি দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ৬০ বছর বয়সী কমলা হ্যারিস প্রচুর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। তবুও তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে জাগিয়ে তুলেছেন, তরুণ ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং প্রজন্মগত পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পেনসিলভানিয়ায় কমলা হ্যারিস বলেন, ‘আমরা ফিরে যাচ্ছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একজন প্রেসিডেন্টের জন্য প্রস্তুত, যিনি বোঝেন একজন নেতার শক্তির মাত্রা, যা নির্ভর করে আপনি কাকে পরাজিত করেছেন তার ওপরে নয়, বরং আপনি কাকে উপরে তুলে ধরছেন তার ওপর।’
বিশ্ববাসীর নজর, উদ্বেগ
গোটা বিশ্বের মানুষ এ নির্বাচন অত্যন্ত উদ্বেগ নিয়ে দেখছেন, কারণ এর ফলাফল মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বড় প্রভাব ফেলবে। এমনকি, মার্কিন গণতন্ত্র নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। গত জুলাই মাসে একটি হত্যাচেষ্টা থেকে ট্রাম্প অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন এবং পুলিশ দ্বিতীয় হামলাচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিল, তাই নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা খুবই বাস্তব।
ওয়াশিংটনে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির মতো ট্রাম্প সমর্থকদের বিদ্রোহের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় বহু সংখ্যক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসের ভবনগুলোর চারপাশে বোর্ড দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী করা হয়েছে।
ট্রাম্প এখনও মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন যে, তিনি সেই নির্বাচনে হেরেছেন। গেল সপ্তাহান্তেও বলেছেন, তার হোয়াইট হাউস ত্যাগ করা উচিত হয়নি।
কমলা হ্যারিসের মুখপাত্র ইয়ান সামস গতকাল সোমবার বলেছেন, ট্রাম্প এবং তার প্রচারণা শিবির ইতোমধ্যেই বার্তা দিচ্ছে, তারা আগেভাগেই বিজয় ঘোষণা করে দিতে পারে।