কমলা হ্যারিসের পরাজয় নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরে উত্তাপ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসছেন। এই পরাজয়ের পর ডেমোক্র্যাট দলের নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করতে দেখা যেছে। আবার অনেকে তাদের নিজেদের আত্মসমীক্ষায়ও ইতিবাচক। আবার ভুল খুঁজে দেখা তাদের দায়িত্ব বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কারণ, পরাজয়ের গ্লানির থেকে বিপুল ব্যবধানের হারটা তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে।
টাইমস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদন বলছে, পরাজয়ের জন্য অনেক কারণ চিহ্নিত হচ্ছে, কিন্তু বেশিরভাগ আঙুল উঠছে জো বাইডেনের পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্তের দিকে। ডেভিড অ্যাক্সেলরড যিনি বারাক ওবামার দুটি জয়ে কৌশল নির্ধারণ করেছিলেন, তিনি বলেন, সময়মতো যদি জো বাইডেন সরে দাঁড়াতেন এবং দলের নতুন নেতৃত্ব আসতে দিতেন, তাহলে গল্পটি হয়তো অন্যরকম হতো
বাইডেনের বয়সজনিত অবস্থা নিয়ে সমালোচনা উঠলেও অনেকেই মনে করছেন কমলার প্রচারণায় কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কমলা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হারানোর পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী নীল রাজ্যগুলিতেও সমর্থন হারান। ২০১২ সালে ওবামা যেখানে ২৭ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন, সেখানে বাইডেনের সময় এটি ২১ পয়েন্টে নেমে আসে এবং কমলার সময় মাত্র ৯ পয়েন্টে এসে ঠেকে। নির্বাচনি ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, কমলা কিছু শ্রেণির মধ্যে ভোটার সমর্থনে পিছিয়ে পড়েছিলেন।
ডেমোক্র্যাটদের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা অনুযায়ী, কমলা নারী ভোটারদের ৫৪ শতাংশ সমর্থন পেলেও বাইডেনের সময় এটি ছিল ৫৭ শতাংশ। একইভাবে, কম আয়ের ভোটারদের মধ্যে কমলা ৪৮ শতাংশ সমর্থন পেলেও বাইডেন পেয়েছিলেন ৫৫ শতাংশ। রঙিন জনগোষ্ঠীর মধ্যে কমলার সমর্থন ৬৫ শতাংশে নেমে আসে, যেখানে বাইডেনের ছিল ৭১ শতাংশ।
কমলার দলের কিছু সিদ্ধান্তেও ত্রুটি দেখা যায়। যেমন–নারীদের গর্ভপাত অধিকার সংরক্ষণের পক্ষে জোর দেওয়া হলেও লাতিনো এবং কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের কাছে এই বার্তা প্রত্যাশিত প্রভাব ফেলেনি। ডেমোক্র্যাটদের কিছু বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যুতে এতটা গুরুত্ব না দিয়ে বর্ণ, আয় ও শিক্ষাগত পটভূমিতে নির্ভরশীল ভোটারদের প্রভাবিত করার দিকে জোর দেওয়া উচিত ছিল।
কমলার প্রচারণায় কৌশলগত ভুলগুলো নিয়ে কিছু সমালোচনা থাকলেও অনেকে তার নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। মিশিগানের প্রতিনিধি হ্যালি স্টিভেন্স বলেন, তিনি (কমলা) প্রতিদিন প্রায়ই এখানে উপস্থিত ছিলেন, নীল দেয়ালকে অবহেলা করেননি। তবে সাবেক কংগ্রেসম্যান টম মালিনোস্কি মনে করেন, কমলা ভালো প্রচারণা চালিয়েছেন, কিন্তু তিনি সঠিক ব্যক্তি ছিলেন না।
এই পরাজয়ের পর ডেমোক্র্যাটদের ভোটার টার্নআউটের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন নেক্সটজেন আমেরিকা ও সুইং লেফটের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই দলগুলো বিপুল অর্থ ব্যয় করেও তরুণ ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের তুলনায় কমলা কম সমর্থন পান। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, পরিস্থিতি হয়তো কমলার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। ডেভিড অ্যাক্সেলরডের মতে, এমন কোনো দল কখনও জয়ী হয়নি যার প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা ৪০ শতাংশের নিচে ছিল।
বিভিন্ন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের সময় ডেমোক্র্যাটদের জন্য এমন পরাজয় অবশ্যম্ভাবী ছিল। তবে, কেউ কেউ এই পরাজয়ের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্যের প্রভাবও দেখছেন।
এদিকে, বাসসের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির পরাজয়ের জন্য জো বাইডেনকে দায়ী করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি নির্বাচন থেকে আগেই সরে দাঁড়াতেন, তাহলে ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করতে পারত। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটি জানিয়েছেন বলে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে। স্থানীয় সময় ৭ নভেম্বর সাক্ষাতকারটি প্রকাশিত হয়। পেলোসি বলেন, যদি প্রেসিডেন্ট বাইডেন আগে সরে দাঁড়াতেন, তাহলে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য প্রতিযোগিতার সুযোগ থাকত।
এদিকে শনিবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হতে কয়েক মাস ধরে নির্বাচনি প্রচার ও বিতর্ক চলে। বাইডেন পুনরায় নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পর ডেমোক্রেটিক পার্টি আর কোনো প্রার্থী বাছাই করেনি। নির্বাচনের চার মাস আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে ধরাশায়ী হওয়ার পর বাইডেন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এ সময় ডেমোক্রেটিক পার্টি তড়িঘড়ি করে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা কমলাকে প্রার্থী মনোনীত করে। সাক্ষাতকারে পেলোসি নির্বাচনি প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তড়িঘড়ি করে কমলা হ্যারসিকে প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন দেওয়ায় বাইডেনের সমালোচনা করেন।
সাক্ষাতকারে কমলা কমলার প্রশংসা করেন পেলোসি বলেন, তিনি মানুষের মধ্যে আশা জাগিয়েছেন। প্রার্থী বাছাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে কমলা জিততেন বলে মনে করেন পেলোসি। তিনি বলেন, হয়তো কমলা আরও বেশি শক্তিশালী হতেন। জনগণের কাছে যেতে পারতেন।
গত ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেলোসি বলেন, বাইডেন কমলা কমলাকে দ্রুত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ায় সে সময় প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে। যদি সবকিছু আরও আগে ঘটত, তাহলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।