চুক্তি মেনে জিম্মিদের মুক্তি দিতে সম্মত হামাস
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/14/hamas.jpg)
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি।
এদিকে, ইসরায়েল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, হামাস নির্ধারিত সময়ে বন্দিদের মুক্তি না দিলে দেশটি পুনরায় সামরিক অভিযান শুরু করবে। নেতানিয়াহু সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার এক বার্তায় বলেন, ‘শনিবার দুপুরের মধ্যে হামাস তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি না দিলে যুদ্ধবিরতি এখানেই শেষ হবে।’
তবে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর চাপে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে হামাস। অন্যদিকে ইসরায়েলও চুক্তি মেনে গাজায় তাঁবু, জেনারেটরসহ মানবিক ত্রাণসহায়তা প্রবেশে বাধা না দিতে সম্মত হয়েছে।
হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ কানৌ বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে আগ্রহী। দখলদার ইসরায়েলেরও চুক্তির শর্তগুলো পুরোপুরি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাদেরকে (ইসরায়েল) চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নে, মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত শর্ত মানতে চাপ দিচ্ছে মধ্যস্থতাকারীরা। শনিবার বন্দি বিনিময়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
গাজায় প্রায় ১৫ মাসের ধ্বংসযজ্ঞের পর ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এই চুক্তির অধীনে শনিবার আরও তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা। তবে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ এনে গত সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) অনির্দিষ্টকালের জন্য জিম্মি মুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয় হামাস।
হামাসের এ ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, শনিবার দুপুরের মধ্যে হামাস সব জিম্মিকে মুক্তি না দিলে গাজায় ‘নরক নেমে আসবে’।
এরপরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাস যদি জিম্মি মুক্তির সময়সীমা মেনে না চলে, তীব্র লড়াই শুরু করবে ইসরায়েল।’
একইসঙ্গে গাজার ভেতরে ও আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীকে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নেতানিয়াহু। এর কিছুক্ষণ পরই গাজা সীমান্তবর্তী ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা পাঠানো ও রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ ৪২ দিন ধরে চলার কথা। এতে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে প্রায় ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৬ ইসরায়েলিসহ পাঁচ থাই নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিনিময়ে কয়েকশ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার মিসরের রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে প্রবেশের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল একাধিক বুলডোজার।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/02/14/gaajaa_inaar.jpg)
মিসরের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গাজায় প্রবেশের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি ও ভ্রাম্যমাণ ঘর বহনকারী ট্রাক প্রস্তুত ছিল। তবে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাড়িগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি ইসরায়েল।
হামাস এর আগে অভিযোগ করে, যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার বিষয়টি বিলম্বিত করছে ইসরায়েল।
তবে রাফাহ ক্রসিং হয়ে গাজায় ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানায় ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখপাত্র ওমের দোসত্রি বলেন, ‘গাজায় কোনো ধরনের ভ্রাম্যমাণ ঘর বা ভারী যন্ত্রপাতি ঢুকতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে কোনো সমন্বয় হয়নি। কেবল আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের সরিয়ে নিতে রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে। গাজায় অন্য সব সহায়তা প্রবেশ করবে কারেম সালেম ক্রসিং হয়ে।’
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, গাজার প্রায় ৬৯ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গাজা সফরের পর জাতিসংঘের অবকাঠামো সংস্থার (এইএনওপিএস) প্রধান জর্জ মোরেইরা দা সিলভা বলেন, শুধু ‘অতুলনীয় মানবিক দুর্ভোগ’ নয়, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও বিপুল ধ্বংসস্তূপ দেখেছি।