ইস্পাত রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপে হতাশ ব্রিটেন, এখনি পাল্টা ব্যবস্থা নয়

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ইস্পাত ও এলুমিনিয়াম রপ্তানিতে উচ্চ হারে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের কারণে তিনি হতাশ। তবে এজন্য এখনি পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন না তিনি বরং ওয়াশিংটনের সঙ্গে বৃহত্তর অর্থনৈতিক চুক্তির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। খবর এএফপির।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রশ্নোত্তর পর্বে আজ বুধবার (১২ মার্চ) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই আর সবার মতো আমিও ইস্পাত ও এলুমিনিয়ামে বৈশ্বিক শুল্ক আরোপের কারণে আমি হতাশ। তবে আমরা এ ক্ষেত্রে বাস্তববাদী পন্থার দিকে যাব।’
কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘ব্রিটেন সব সম্ভাবনাকে আলোচনার টেবিলে রাখতে চায়। তবে একটি অর্থনৈতিক চুক্তির বিষয়ে আমরা দর কষাকষি চালিয়ে যাব; যার আওতার মধ্যে শুল্ক আরোপের বিষয়টি থাকবে, যদি আমরা সফল হই।’
স্টারমারের এই বক্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অবস্থানের বেশ বিপরীত। ইইউ জানিয়েছে, আগামী ১ এপ্রিল থেকে তারা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র যদি তার ব্যবসায়িক অংশীদারদের ইস্পাত ও এলুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে তবে তারাও সে পথে হাঁটবে।
এর আগে ব্রিটিশ ব্যবসা ও বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস বলেছেন, যুক্তরাজ্য একটি বাস্তবধর্মী পন্থার দিকে দৃষ্টি রাখছে এবং প্রতিনিয়ত একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এটা করা হবে যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও অর্থনীতিকে লাভবান করতে; যাতে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে বাতিল করে দেয়।

এ বিষয়ে আলোচনার জন্য গত মাসে ওয়াশিংটন সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখাও করেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। এ ধরনের একটি চুক্তির জন্য ব্রিটেন অপেক্ষা করছিল ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকেই। আর এই বৈঠকের পর থেকে ব্রিটিশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সাবধানতার সঙ্গে আশা প্রকাশ করছিল যে যুক্তরাজ্য হয়তো লৌহজাত পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ এড়াতে পারবে।
আজ বুধবার তাই ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপকে ‘হতাশাজনক’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ‘আমরা যুক্তরাজ্যের শিল্পের প্রতি আমাদের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখব।’
ব্রিটেন তার ইস্পাতের ১০ শতাংশ রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০২৩ সালে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের ইস্পাত রপ্তানি করেছিল।
এ দিকে যুক্তরাজ্যের ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে জড়িতে ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো মার্কিন শুল্ক আরোপকে ‘ভয়ানক আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
গত মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে যুক্তরাজ্য তার ইস্পাত শিল্পকে রক্ষায় কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেয়। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানান, এ খাতে প্রায় আড়াই বিলিয়ন পাউন্ড সহায়তার পরিকল্পনা করছে তার সরকার। পাশাপাশি অবৈধ বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে যুক্তরাজ্যের ইস্পাত শিল্পকে রক্ষায় আলোচনা শুরুর ঘোষণাও দেয় ব্রিটিশ সরকার।
যদিও যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে এখনই আশা প্রকাশ করা হচ্ছে না, তবে গত ফেব্রুয়ারির আলোচনাকে এক্ষেত্রে একটি পরিষ্কার অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন অনেকে।