গাজায় বর্বর ইসরায়েলের তাণ্ডব : নিহত বেড়ে ৩৪২

গাজায় দখলদার ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৩৪২ ছাড়িয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) চালানো এই হামলার ফলে গত দুই মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়েছে।
গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে এ হামলা চালানো হয়, যার মধ্যে দক্ষিণের খান ইউনিস ও রাফাহ, উত্তরের গাজা সিটি এবং মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে। খবর আল-জাজিরার।
গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি বাতিলের সিদ্ধান্ত’ বলে উল্লেখ করেছে।

এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘নেতানিয়াহু এবং তার উগ্রপন্থী সরকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা গাজার বন্দিদের অজানা পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।’
ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) বলেছে, ইসরায়েল ‘ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার সব প্রচেষ্টা নস্যাৎ করছে’।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে ‘জোরালো পদক্ষেপ’ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তার কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ‘হামাস আমাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বন্দিদের মুক্তি দেয়নি, তাই ইসরায়েল এখন থেকে আরও শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ নেবে।’
গাজার শিক্ষক আহমেদ আবু রিজক জানান, তিনি ও তার পরিবার ‘ইসরায়েলি হামলার শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন’।
এই শিক্ষাক আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত ছিলাম, আমাদের বাচ্চারা ভয় পেয়েছিল। আত্মীয়দের কাছ থেকে অসংখ্য ফোন কল পেয়েছি, তারা সবাই খোঁজ নিচ্ছিল। রাস্তায় শুধু অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। অনেক পরিবার তাদের শিশুর ছিন্নভিন্ন মরদেহ হাতে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছে।’

দেইর আল-বালাহ থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম বলেন, ‘ইসরায়েলি হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, অস্থায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশ্রয়কেন্দ্র।’
তারেক আবু আজজুম আরও বলেন, ‘নবজাতক, শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ বহু নিরীহ মানুষ এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হামাসের উচ্চপদস্থ নেতা রয়েছেন।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, যদি অবশিষ্ট বন্দিরা মুক্তি না পায়, তাহলে ‘গাজায় নরকের দরজা খুলে যাবে’। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সব বন্দি ফিরে না আসে এবং যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য অর্জিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ হবে না।’

ইসরায়েলের ১৮ মাসের এই যুদ্ধ গাজার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। গাজার হাসপাতাল, বিদ্যালয় ও ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।