ট্রাম্প-জেলেনস্কির ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপ, স্থায়ী শান্তির আশা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপ হয়েছে। এ ফোনালাপকে উভয় নেতাই ‘ইতিবাচক’ ও ‘গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করেছেন। খবর বিবিসির।
ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং উভয় পক্ষের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা। ট্রাম্প আরও জানান, যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা এগিয়ে চলছে।
ফোনালাপের পর জেলেনস্কি এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আমেরিকার নেতৃত্বে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সহায়তায় এ বছরই স্থায়ী শান্তি অর্জন করা সম্ভব।’
এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি জানান, তিনি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্ভাব্য মার্কিন মালিকানা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ইউরোপের বৃহত্তম এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনরায় কার্যকর হতে দুই বছরের বেশি সময় লাগতে পারে বলেও তিনি স্বীকার করেন।
জেলেনস্কি আরও জানান, ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যস্থতায় একটি আংশিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হতে পারে, যেখানে জ্বালানি অবকাঠামো, রেললাইন ও বন্দরগুলোর ওপর হামলা বন্ধ থাকবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, রাশিয়া যদি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে, তবে ইউক্রেন পাল্টা জবাব দেবে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারি, ততক্ষণ পর্যন্ত ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা—সবকিছু চলতে থাকবে।’

জেলেনস্কি আরও বলেন, রাশিয়ার পশ্চিম কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনারা অবস্থান নেওয়ার কারণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত নন।
ট্রাম্প ও জেলেনস্কির ফোনালাপের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, ইউক্রেনকে বাড়তি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তিনি জানান, প্রযুক্তিগত দলগুলো সৌদি আরবে বৈঠক করবে যাতে কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করা যায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দায়িত্ব নেয়, তবে তা ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর জন্য সর্বোত্তম সুরক্ষা হবে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপে, রুশ প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে তিনি শর্ত দেন, ইউক্রেনের মিত্ররা সামরিক সহায়তা বন্ধ করলে তবেই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি সম্ভব।
এদিকে, স্থানীয় সময় বুধবার (১৯ মার্চ) উভয় দেশই পাল্টাপাল্টি হামলা চালায়, যেখানে কিয়েভ অভিযোগ করে, তাদের হাসপাতাল লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার ক্রাসনোদার অঞ্চলে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি তেল ডিপোতে আগুন লাগে।
তবে এসব হামলার মাঝেও যুদ্ধবন্দি বিনিময় হয়েছে। উভয় দেশই ১৭৫ জন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, যেখানে রাশিয়া অতিরিক্ত ২২ জন গুরুতর আহত ইউক্রেনীয় সৈন্যকে ছেড়ে দিয়েছে। জেলেনস্কি একে ‘সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময়গুলোর একটি’ বলে অভিহিত করেছেন।