‘হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে হস্তক্ষেপ করার অবস্থানে ছিল না ভারত’

গত বছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে অবগত ছিল ভারত, তবে হস্তক্ষেপ করার মতো অবস্থানে ছিল না বলে দাবি করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর।
গতকাল শনিবার (২২ মার্চ) ভারতের পররাষ্ট্র পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, ভারত শুধু শেখ হাসিনাকে ‘পরামর্শ’ দিতে পারত, কারণ তার ওপর পর্যাপ্ত প্রভাব খাটানোর সুযোগ ছিল না।
জয়শঙ্কর জানান, বাংলাদেশে গত বছরের ৫ আগস্ট সংঘটিত সরকার পতনের পূর্ববর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতসহ কয়েকটি বড় আন্তর্জাতিক পক্ষ অবগত ছিল। তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্কের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা না চালানোর জন্য সতর্ক করেছিল, নাহলে তাদের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে নিষিদ্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে প্রতিবেশী দেশগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান প্রসঙ্গ বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে সংলাপ শুরু করলেও, শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ফলে দিল্লি-ঢাকার সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন চলছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশ সফর করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও কোনও বক্তব্য দেয়নি। তবে আগামী ২-৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিতব্য বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে তাদের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে। শিগগিরই চীনে সফর করতে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যেখানে বিমান যোগাযোগসহ বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।

জয়শঙ্কর বলেন, “বাংলাদেশে বহিরাগত শক্তির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। চীন আমাদের শত্রু নয়, তবে প্রতিযোগী।”
বৈঠকে সার্ক (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) নিয়ে আলোচনায় জয়শঙ্কর বলেন, “সার্ক বন্ধ হয়নি, এটি কেবল বিরতিতে আছে,” যা ভবিষ্যতে সংস্থাটির পুনর্জীবনের ইঙ্গিত দেয়।
২০১৬ সালে উরি হামলার পর ভারতের অংশগ্রহণ বাতিল করায় পাকিস্তানে নির্ধারিত ১৯তম সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপর থেকে ভারত বিমসটেকের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।