টিউলিপের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার অভিযোগ

রাজধানী ঢাকায় প্রায় ছয় লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ কোটি টাকা) মূল্যের একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক নগর মন্ত্রী ও ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। অভিযোগ উঠেছে তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই ফ্ল্যাটের মালিকানা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল গতকাল শনিবার (৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক দাবি করেছেন, ২০০২ সালে তার বাবা-মা উপহার হিসেবে ফ্ল্যাটটি দেন এবং ২০১৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেটি ‘বৈধভাবে’ তার ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করেন।
তবে ঢাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাম্প্রতিক নথি বলছে, ফ্ল্যাটটির মালিক এখনও টিউলিপ সিদ্দিকই। এ নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত মাসে দুদক জানায়, ২০১৫ সালে টিউলিপ সিদ্দিক ‘হেবা’ দলিলের মাধ্যমে ফ্ল্যাটটির মালিকানা তার বোন আজমিনার নামে হস্তান্তরের চেষ্টা করেন। এই দলিলের মাধ্যমে কেউ ভালোবাসা ও স্নেহের নিদর্শন হিসেবে কোনো সম্পত্তি পরিবারের সদস্যের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর তখনই বৈধ হিসেবে গণ্য হয়, যখন সেটির মালিকানা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করা হয়।
দুদক দাবি করেছে, হেবা দলিলটি ‘ভুয়া’, কারণ যিনি এটি সত্যায়িত করেছেন বলে দেখানো হয়েছে, সেই ব্যারিস্টার নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন, দলিলে থাকা তার স্বাক্ষরটি জাল করা হয়েছে।
এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনে তার নামে থাকা সাত লাখ পাউন্ডের আরেকটি ফ্ল্যাট নিয়ে বিতর্কের মুখে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। ওই ফ্ল্যাটটি তাকে উপহার দিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক একজন আবাসন ব্যবসায়ী, যিনি টিউলিপের খালা ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। শেখ হাসিনা গত আগস্টে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত হন।
২০২২ সালে টিউলিপ দাবি করেছিলেন, সেই ফ্ল্যাটটিও তার বাবা-মা কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাকের উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করে জানান, টিউলিপ অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন।

টিউলিপ সিদ্দিক এক্সে (সাবেক টুইটার) দুদকের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, “যুক্তরাজ্যে আইন, ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষতার ঐতিহ্য রয়েছে। আমি যেকোনো যুক্তিসঙ্গত প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত, তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রে আমি জড়াব না।”
টিউলিপ সিদ্দিক আরও বলেন, ‘আমি একজন ব্রিটিশ নাগরিক ও সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার কাজকে কলঙ্কিত করার এই চেষ্টা সফল হবে না।’