জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থার পরিদর্শকদের বহিষ্কারের হুমকি ইরানের

‘বহিরাগত হুমকির’ প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের বহিষ্কার করা হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইরান। তবে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, শনিবার ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান সরাসরি পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সরাসরি আলোচনা করবে। খবর আলজাজিরার।
ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের ধারায় পুনরায় ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
গত বুধবার ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে আলোচনা যদি কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়, তাহলে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ ‘একেবারেই’ সম্ভব হয়ে উঠবে। ইসরায়েল স্পষ্টতই এতে খুব বেশি জড়িত থাকবে এবং সেই (সামরিক) পদক্ষেপের নেতৃত্ব দেবে।
ইরান ধারাবাহিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেছেন, ‘বহিরাগত হুমকির’ প্রতিক্রিয়ায় তেহরান জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের বহিষ্কার করতে পারে।
রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী শামখানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, বহিরাগত হুমকি অব্যাহত এবং ইরান সামরিক আক্রমণের মুখে থাকায় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) থেকে পাঠানো পরিদর্শকদের বহিষ্কার এবং সহযোগিতা বন্ধ করাসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কথা উল্লেখ করে আলী শামখানি বলেন, ‘সমৃদ্ধ উপকরণ নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।’
ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস ইরানকে ভুল পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ধরনের পদক্ষেপের হুমকি অবশ্যই ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির দাবির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এছাড়া ইরান থেকে আইএইএর পরিদর্শকদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হলে তা হবে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণ এবং ইরানের একটি ভুল হিসাব।’
ব্রুস আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এটি কোনো বৃহত্তর পরিকল্পনা বা কাঠামোর অংশ নয়। এতে ইরানিরা বিষয়টি গুরুত্বসহ নিচ্ছে কিনা তা বোঝা যাবে।’
এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও তেলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।

২০১৫ সালে ইরান ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে একটি যুগান্তকারী পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছেছিল, যাতে তাদের পারমাণবিক কর্মকাণ্ডে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের তদারকি ও বিধিনিষেধের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যায় এবং ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে। এর এক বছর পর ইরান চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যেতে শুরু করে এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ত্বরান্বিত করে। বর্তমানে দেশটি বলছে, তারা প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিরুদ্ধে, তবে পরোক্ষ আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও আশা প্রকাশ করেছেন, আলোচনা শান্তির দিকে নিয়ে যাবে। রুবিও ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে বলেন, ‘আমরা আশা করি এটি শান্তির দিকে পরিচালিত করবে। আমরা এ ব্যাপারে আশাবাদী।’