ভারত নাকি পাকিস্তান, সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক আরও একবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা কূটনৈতিক অঙ্গনে তীব্র টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে। এই চলমান অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সামরিক শক্তির বিচারে কোন দেশ কতটা শক্তিশালী, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে।
সামরিক সক্ষমতার নিরিখে দেশগুলোর তুলনামূলক চিত্র উঠে আসে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে। ২০২৫ সালের গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, সামরিক শক্তিমত্তার বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ভারত দীর্ঘকাল ধরে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে আছে ভারত। এর আগে ২০০৫ সালে দেশটি পঞ্চম স্থানে ছিল। অন্যদিকে, পাকিস্তান এই র্যাঙ্কিংয়ে ২০২৫ সালে দ্বাদশ স্থানে অবস্থান করছে। যদিও এর আগে দেশটি গত বছর নবম স্থানে ছিল।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক শক্তির একটি তুলনামূলক চিত্র দেখে নেওয়া যাক—
স্থলবাহিনী
ভারত : ভারতের স্থলভাগে চার হাজার ২০১টি ট্যাঙ্ক, এক লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৪টি বিভিন্ন ধরনের সামরিক গাড়ি, ১০০টি স্বচালিত আর্টিলারি এবং ২৬৪টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস) রয়েছে।
পাকিস্তান : পাকিস্তানের স্থল যুদ্ধ সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে দুই ৬২৭টি ট্যাঙ্ক, ১৭ হাজার ৫১৬টি সামরিক গাড়ি, ৬৬২টি স্বচালিত আর্টিলারি এবং ৬০০টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম।
স্থলভাগের অস্ত্রের সংখ্যা বিবেচনায় ভারতের পাল্লা বেশ ভারী। বিশেষ করে ট্যাঙ্কের সংখ্যা এবং সামরিক গাড়ির ক্ষেত্রে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে। তবে মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেমের সংখ্যায় পাকিস্তান তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
বিমানবাহিনী
ভারত : আকাশপথে ভারতের মোট দুই ২২৯টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। এর মধ্যে আছে ৫১৩টি যুদ্ধবিমান, ৮৯৯টি হেলিকপ্টার এবং ৮০টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার।
পাকিস্তান : পাকিস্তানের বিমান বহরে মোট এক হাজার ৩৯৯টি এয়ারক্রাফট বিদ্যমান। এর মধ্যে ৩২৮টি যুদ্ধবিমান, ৩৭৩টি হেলিকপ্টার এবং ৫৭টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে।
আকাশসীমায় আধিপত্যের ক্ষেত্রেও ভারত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ভারতের যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টারের সংখ্যা পাকিস্তানের তুলনায় যথেষ্ট বেশি, যা ভারতীয় বিমানবাহিনীকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রেখেছে।

নৌবাহিনী
ভারত : নৌশক্তিতে ভারতের ২৯৩টি ‘অ্যাসেট’ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, ১৩টি ডেস্ট্রয়ার, ১৪টি ফ্রিগেট, ১৮টি সাবমেরিন এবং ১৩৫টি প্যাট্রোলিং ভেসেল উল্লেখযোগ্য।
পাকিস্তান : পাকিস্তানের নৌবাহিনীর ‘অ্যাসেট’-এর সংখ্যা ১২১টি। তবে দেশটির কোনো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ও ডেস্ট্রয়ার নেই। পাকিস্তানের নৌবহরে ৯টি ফ্রিগেট, আটটি সাবমেরিন ও ৬৯টি প্যাট্রোলিং ভেসেল রয়েছে।
সমুদ্রপথে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারত স্পষ্টতই এগিয়ে। ভারতের দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার দেশটির নৌবাহিনীকে কৌশলগত সুবিধা প্রদান করে। ডেস্ট্রয়ার ও ফ্রিগেটের সংখ্যাও ভারতের বেশি। সাবমেরিনের সংখ্যায় অবশ্য খুব বেশি পার্থক্য দেখা যায় না।
পরমাণু সক্ষমতা
উপরের পরিসংখ্যানগুলোয় ভারত সামরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকলেও, পরমাণু অস্ত্রের ক্ষেত্রে উভয় দেশই প্রায় সমকক্ষ সক্ষমতা রাখে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্র থেকে জানা যায়। এই বিষয়টি উভয় দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।
অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা
আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তান তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির দিকে নজর দিয়েছে। তবে দুর্বল অর্থনীতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত কয়েক দশকে পাকিস্তান তার প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় সামরিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি দেশটির সামরিক বাহিনীকে আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক শক্তি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, স্থল, আকাশ ও নৌ—এই তিন বিভাগেই ভারত পাকিস্তানের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে। তবে পরমাণু অস্ত্রের ভারসাম্য এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উভয় দেশের সামরিক কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুর্বল অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ পাকিস্তানের সামরিক অগ্রগতিকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করেছে, যা আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।