ইরানের সঙ্গে তৃতীয় বারের মতো বৈঠকে বসবেন মার্কিন দূত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং তার বৈশ্বিক দূত স্টিভ উইটকফ টানা তৃতীয় সপ্তাহের মতো ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন। ওয়াশিংটন মনে করছে, এই আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন পরমাণু চুক্তির দিকে এগোনো সম্ভব। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) এএফপির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত শনিবার রোমে উইটকফ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে উভয় পক্ষ আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করে কারিগরি পর্যায়ে আলোচনার ওপর জোর দেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, আগামী শনিবার (২৬ এপ্রিল) ওমানে অনুষ্ঠিতব্য কারিগরি আলোচনায় স্বয়ং উইটকফ উপস্থিত থাকবেন। এর আগে গত ১২ এপ্রিল ওমানেই আরাগচির সঙ্গে তার প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সাংবাদিকদের জানান, ‘পরবর্তী আলোচনা শনিবার ওমানে অনুষ্ঠিত হবে এবং এটি কারিগরি দলের প্রথম বৈঠক।’ তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, ‘বিশেষ দূত উইটকফ সেখানে উপস্থিত থাকবেন।’
মার্কিন কারিগরি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র দপ্তরের নীতিগত পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান মাইকেল অ্যান্টন। রক্ষণশীল এই চিন্তাবিদ পারমাণবিক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হলেও যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনবিরোধী কঠোর বক্তব্যের জন্য পরিচিত।

উল্লেখ্য, কোনো প্রকার কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই ট্রাম্প উইটকফকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেন। এর আগে তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন, যদিও ইসরায়েলের হিজবুল্লাহ বিরোধী নতুন হামলার কারণে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। বর্তমানে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানেও মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকের কর্মসূচি রয়েছে।
ইউরোপের সঙ্গে বসতে আগ্রহী ইরান
২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৫ সালের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। তবে ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প ফের কূটনৈতিক পথে সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং ইসরায়েলকে ইরানের ওপর সামরিক হামলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, তিনি জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মতো ইউরোপীয় দেশগুলোতে আলোচনায় বসতে আগ্রহী। এই দেশগুলো ২০১৫ সালের চুক্তির অংশীদার ছিল এবং ট্রাম্পের পূর্বের সিদ্ধান্ত ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল।
আরাগচি তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘আমি শুধু পরমাণু ইস্যু নয়, পারস্পরিক স্বার্থ ও উদ্বেগের প্রতিটি বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।’ ইউরোপীয় দেশগুলোর ইরানবিরোধী কঠোর অবস্থান এবং ইসরায়েলের চাপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির ‘বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠীর প্রভাব’ থেকে বেরিয়ে এসে নতুন পথে চলার সুযোগ রয়েছে। এর আগে বুধবার তিনি চীনে আলোচনায় অংশ নেন এবং গত সপ্তাহে রাশিয়া সফর করেন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ লেমোইন এএফপিকে জানিয়েছেন, ইরানি মন্ত্রীর এই আগ্রহের বাস্তব প্রতিফলন প্যারিস গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। তিনি যোগ করেন, ফ্রান্স ‘পরমাণু বিষয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী’। তবে জার্মানি ও ব্রিটেন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
‘স্ন্যাপব্যাক’ নিয়ে উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরান এক বছর পর্যন্ত চুক্তির শর্ত মেনে চললেও পরবর্তীতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়ে ৬০ শতাংশে নিয়ে যায়, যা চুক্তিতে নির্ধারিত তিন দশমিক ৬৭ শতাংশের অনেক বেশি, যদিও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের নিচে।
গত ডিসেম্বরে ইউরোপের তিন দেশ (জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন) ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখলে ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া চালুর হুমকি দেয়। এই প্রক্রিয়া সক্রিয় হলে ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় আরোপিত হবে। তবে এই প্রক্রিয়া কার্যকর করার সময়সীমা অক্টোবরেই শেষ হয়ে যাবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইউরোপীয় দেশগুলোকে এই বিকল্পটি ব্যবহারের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ইরান আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া সক্রিয় হলে তারা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন দূতের তৃতীয়বারের মতো ইরানের সঙ্গে বৈঠকে বসা একটি নতুন কূটনৈতিক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এই আলোচনা শেষ পর্যন্ত কোনো ফল বয়ে আনে কিনা, তা সময়ই বলবে।