ইরানে বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ৮, আহত ৭৫০

ইরানের বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত শহিদ রাজয়ি বন্দরে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই দুর্ঘটনায় অন্তত আটজন নিহত এবং ৭৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
বিস্ফোরণের সঠিক কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বন্দরটির শুল্ক কার্যালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সম্ভবত বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ সংরক্ষণ ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ফলে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।
রাষ্ট্রীয় টিভিতে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বন্দরের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশ ছেয়ে ফেলেছে এবং অনেকগুলো জ্বলন্ত কনটেইনারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান এই ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি জরুরি ভিত্তিতে ‘পরিস্থিতি ও ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে’ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসকান্দার মোমেনিকে দ্রুত ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন।
ইরানের রাজধানী তেহরানের প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত শহিদ রাজয়ি বন্দর দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাধুনিক কনটেইনার বন্দর হিসেবে পরিচিত।
ইরনা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এটি বন্দর আব্বাস শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালির উত্তরে অবস্থিত। এই প্রণালি বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের প্রধান পথ।
রাজয়ি বন্দরটি ইরানের হরমোজগান প্রদেশে অবস্থিত।
প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান মেহরদাদ হাসানজাদে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে জানিয়েছেন, বন্দরের সংরক্ষিত কয়েকটি কনটেইনারে বিস্ফোরণের কারণেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মেহরদাদ আরও জানান, আহত ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার করে নিকটবর্তী চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও তা অনুভূত হয়েছে।
তাসনিম বার্তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিস্ফোরণে বন্দরের অধিকাংশ ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল প্রোডাক্টস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, এই বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনো পরিশোধন কেন্দ্র, জ্বালানি ট্যাংক, বিতরণ কেন্দ্র বা তেলের পাইপলাইনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা আরও নিশ্চিত করেছে যে, বন্দর আব্বাসের তেল স্থাপনাগুলো স্বাভাবিকভাবেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
উল্লেখ্য, ইরানে এ ধরনের বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা তুলনামূলকভাবে বিরল। এর কয়েক মাস আগে দেশটির পূর্বাঞ্চলের তাবাসে একটি কয়লাখনিতে গ্যাস লিকেজের কারণে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ৫০ জনের বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের সময়, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ওমানে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন।