মুদি দোকানে বিক্রি বেড়েছে, দাম বেশি রাখার অভিযোগ
বিশ্বে করোনাভাইরাস এখন আতঙ্কের আরেক নাম। বাংলাদেশেও এর ভয়াল থাবা হানা দিয়েছে। এরই মধ্যে ১৭ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং একজনের মৃত্যু ঘটেছে। এতে দেশের জনগণের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আর এ আতঙ্কে মুদি দোকান থেকে বিভিন্ন নিত্যপণ্য ক্রয় বেড়েছে । অনেক দোকানি বলছেন, ঈদের আগেও এমন বিক্রি হয় না।
কোনো কোনো দোকানে পণ্য শেষ পর্যায়ে দেখা গেছে। আবার অনেক দোকানি পণ্য অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বলে ক্রেতা অভিযোগ তুলছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন চালে কেজিপ্রতি ছয়-সাত টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন ডালে মানভিত্তিক ১০ টাকা ও আটায় দাম বাড়ানো হয়েছে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, ভাটারা, যাত্রাবাড়ী, দোলাইরপার, বংশাল, হাতিরপুল, টিকাটুলীসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানে মানুষ অনেক বাড়তি পণ্য কিনছেন। সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, যদি ঢাকাসহ সারা দেশ লকডাউন করা হয়, তাহলে ঘর থেকে বের হয়ে এ পণ্য কিনতে পারব কি না?
রাজধানীর শনির আখড়ার জিয়া সরণিতে দোকানি ইব্রাহিম বলেন, করোনার কারণে দোকানের বিক্রি চার-পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। ঈদের সময়ও এমন বিক্রি হয় না। তিনি বলেন, যদি করোনার কারণে ঢাকাসহ সারা দেশ লকডাউন হয়ে যায়, সে আতঙ্কে লোকজন বেশি করে পণ্য কিনে বাসায় মজুদ করছে। এ ছাড়া তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এখন পণ্য বেশি পরিমাণে কিনছি না। কারণ, লকডাউনের কারণে যদি আমরা দোকানপাট খুলতে না পারি বা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলে যদি ব্যবসা না করতে পারি, তাই দোকানে পণ্য বেশি তুলছি না।’
ফকিরাপুলের হাসেম ট্রেডার্সের দোকানি শাকিল হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে সবার মতো আমাদেরও অনেক বিক্রি বেড়ে গেছে। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পাঁচগুণ বেশি পণ্য নিচ্ছে। আর দোকানে আমরাও নতুন করে পণ্য তুলছি না। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পণ্য দোকানে আবার তোলার চেষ্টা করবে।’
এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাড়লেও যথেষ্ট মজুদ আছে। করোনার কারণে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে বেশি পণ্য ক্রয়ের ফলে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছেন। স্বল্প আয়ের মানুষ অভিযোগ করছেন, দোকানে পণ্য কম দেখিয়ে দোকানিরা অনেক বেশি দাম রাখছেন।
ডালিয়া নামের এক ক্রেতা জানান, তিনি বিভিন্ন বাসায় চুক্তিভিত্তিক গৃহকর্মীর কাজ করেন। সবাই বেশি পরিমাণে পণ্য কেনায় সব পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। কোনো কোনো দোকানে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যও নেই। এতে করে নিম্ন আয়ের মানুষ ক্রয় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
শিকদার নামের আরেক ব্যক্তি জানান, তিনি সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করেন। স্ত্রী-সন্তানসহ ঢাকায় থাকেন। মাসের শেষ হওয়ায় বেতন এখনো মেলেনি। তাই সবার মতো পণ্য কিনতে পারছেন না। সামনে পণ্য পাবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত।
এদিকে চাল বাড়তি দামে বিক্রি করায় গতকাল রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দুটি আড়তকে জরিমানা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মোবাইল টিম। গতকাল রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘মা-মণি’ ও ‘রাইস’ নামে দুটি চালের আড়তকে জরিমানা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল।
গত ১৮ মার্চ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, করোনাভাইরাস এবং আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে সরকারের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে। এ জন্য আতঙ্কিত এবং অস্থির হওয়া যাবে না।
টিপু মুনশি বলেন, ‘স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পরই সাধারণ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে পণ্য ক্রয়ে। তাঁরা মনে করছেন, নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি হবে। সাপ্লাই থাকবে না। এই সুযোগগুলো নিচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। এমনকি আছে সরবরাহও।’
এদিকে আজ শুক্রবার রাজধানীর বেশিরভাগ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাছ ও মাংসের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। বিভিন্ন মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-৫০০ টাকায়। নলা বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা কেজিতে। তেলাপিয়া ১৩০-১৭০ টাকা, পাঙাশ ১৪০-১৮০ টাকা কেজি, শিং ৩০০-৪৫০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৭৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৮০০ টাকা এবং টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২৫-১৩০ টাকা কেজি। তবে পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি আগের মতো বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকায়। লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে। গরুর মাংস ৫৫০-৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭০০-৮৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।