‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ওয়ালটন র্যাম উৎপাদন কার্যক্রমের উদ্বোধন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/12/26/walton-ram-1.jpg)
প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে একের পর এক সাফল্য দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ-কম্পিউটার এবং এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির পর এবার দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে র্যাম (র্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি)। কম্পিউটার ও ল্যাপটপের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ যন্ত্রাংশ তৈরির মাধ্যমে দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পে নতুন এক মাইলফলক সৃষ্টি করল বাংলাদেশি টেক জায়ান্ট ওয়ালটন। র্যামের মতো উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ তৈরির পর প্রসেসর উৎপাদনের বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) অডিটোরিয়ামে কেক কেটে আড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওয়ালটন র্যামের উৎপাদন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে র্যাম উৎপাদন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি।
এ ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এস এম জাহিদ হাসান, কম্পিউটার বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রকৌশলী লিয়াকত আলী, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফিরোজ আলম, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর মিলটন আহমেদসহ বাংলাদেশ সরকারের এবং ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ওয়ালটন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে তৈরি র্যাম মূলত নিজেদের তৈরি ল্যাপটপ ও কম্পিউটারে ব্যবহার করবে ওয়ালটন। পাশাপাশি খুচরা যন্ত্রাংশ হিসেবে উচ্চপ্রযুক্তির এ পণ্য অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটন র্যাম রপ্তানি হবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2019/12/26/walton-ram-2.jpg)
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এ অনুষ্ঠানে আজ উপস্থিত হয়েছি আমরা বিজয়ী হওয়ার জন্য। আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গী হতে চাই। কোনোভাবেই এটা থেকে আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি থাকাকালে আমি ওয়ালটনকে স্পন্সর হিসেবে নিয়ে আসি। তাদের বলেছিলাম, আপনারা ক্রিকেটকে সাপোর্ট দেন, আপনাদের বিক্রি আর জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে। ক্রিকেটে তাদের সেই বিনিয়োগ বৃথা যায়নি। আমি বিশ্বাস করি, ওয়ালটনের হাত ধরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। আশা করি, ইলেকট্রনিকস বাজারে ওয়ালটন আরো অনেক নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসবে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরো অনেক ওপরের সাড়িতে যাবে।’
মোস্তাফা জব্বার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উৎপাদক দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা এখন উৎপাদক দেশের কাতারে অবস্থান করছি, যেখানে আমরা একসময় বিদেশি ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। ইতোমধ্যে ওয়ালটনের ল্যাপটপ রপ্তানিও হচ্ছে। সুতরাং আমাদের এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে। আর ওয়ালটন নিজেকে একটি সম্মানজনক ব্র্যান্ড হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।’
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “ওয়ালটন এখন প্রতি মাসে চার লাখ মোবাইল ফোন উৎপাদন করছে। মেইড ইন বাংলাদেশ স্বপ্ন নয়, এটা এখন বাস্তব। ফ্যাক্টরি চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ওয়ালটন ৮০ হাজারের বেশি ল্যাপটপ উৎপাদন করেছে। সরকারের আইসিটি ডিভিশন ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’-এর জন্য দুই বছর আগে ১৩ হাজার ল্যাপটপ কিনেছিল, যা এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। অন্যান্য কোম্পানির ল্যাপটপের তুলনায় ওয়ালটনের ল্যাপটপ কোনো অংশেই কম নয়। কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় জানতে পারি, অতি শিগগির ওয়ালটন স্মার্ট ওয়াচও বাংলাদেশের বাজারে আসছে।”
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ কারখানা চালু করে ওয়ালটন। এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে দেশের প্রথম মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন কারখানারও উদ্বোধন করে প্রতিষ্ঠানটি। দেশে কম্পিউটার কারখানা চালুর পর থেকেই দুই স্তরের মাদারবোর্ড বানাচ্ছিল ওয়ালটন। এর কয়েক মাস পরে শুরু হয় মাল্টিলেয়ার মাদারবোর্ড তৈরি। বর্তমানে নিজস্ব কারখানায় ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন করছে ওয়ালটন।
ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক ও কম্পিউটার বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী জানান, দেশে উৎপাদিত র্যাম ডিসেম্বর মাসেই তাদের তৈরি ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের সঙ্গে প্রথমে বাজারজাত করা হবে। র্যামের পর ডিজিটাল ডিভাইসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ প্রসেসর উৎপাদনের উদ্যোগ নিচ্ছে ওয়ালটন।
দেশে যাঁরা প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন করছেন, এটি তাঁদের জন্য নতুন আশার খবর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ উদ্যোগ ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ মিশনে অন্যদেরও এগিয়ে আসার পথ দেখাবে।