পেঁয়াজের দাম : কথা টেকেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/09/20/photo-1568965940.jpg)
‘পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দিয়েছিল। পর্যাপ্ত মজুদের কথা উল্লেখ করে ওই দিন বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেছিলেন, ‘চাহিদার তুলনায় আমাদের মজুদ পর্যাপ্ত। দেশবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ ঘোষণার পর ৯৬ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বরও যা ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হতো।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য টনপ্রতি ২৫০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করার ঘোষণা দেয়। ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে এক লাফে ৮০ টাকা হয়ে যায়।
হঠাৎ করে পেঁয়াজের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন ভোক্তারা। রাতারাতি এ দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে ব্যবসায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠকে বসেন।
ওই বৈঠকে একজন সাংবাদিক জানান, ভারত গত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বাজারে ৩০ টাকার পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়, যে পেঁয়াজের দাম আগের একদিন আগে ছিল ৩০ টাকা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয় কী করে? এটা সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ কি না?
এ প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া দেশেও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। টিসিবি খোলা ট্রাকে বিক্রি শুরু করেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
আজ শুক্রবার সকালে কারওয়ান বাজার পাইকারি আড়ত, রাজাবাজার ও হাতিরপুল কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ সেই আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা করে। আর আমদানি করা বিদেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা করে।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি আড়তে পাঁচ কেজির এক পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা করে। এখানে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা করে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তদার আফজাল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রি করতে পারতাম। গত সপ্তাহে যে দাম ছিল, গতকালও একই দামে শ্যামবাজার থেকে আমরা মাল (পেঁয়াজা) এনেছি।’
আফজাল হোসেন আরো বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ আগেও আমরা পাল্লা (পাঁচ কেজি) বিক্রি করেছি ১৩০ টাকা করে। হঠাৎ করেই এটা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়।’
পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কেন এতটা বাড়ল? এমন প্রশ্নের জবাবে আফজাল বলেন, ‘মাল কম। তাই দাম বেশি। তা ছাড়া শুনেছি, ভারত নাকি দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।’
রাজধানীর রাজাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, এক কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা করে কিনছেন ক্রেতারা। ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা মামুন শেখ দুই কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন। প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৮০ টাকা করে।
মামুন শেখ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত ১০/১২ দিন আগেও পেঁয়াজ কিনেছি ৩০ টাকা করে। আজ কিনলাম ৮০ টাকা করে। কার কাছে নালিশ করব। কে শুনবে আমাদের কথা।’