নির্বাচনের আগে ৩৩ হাজার ৭২৯ কোটি টাকার শুল্কছাড় : এনবিআর
জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগের বছরে বিশাল অঙ্কের শুল্ক ছাড় দিয়েছিল সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। এই ধরনের শুল্ক ছাড় অন্য যেকোন বছরের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
নির্বাচনের আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৩ হাজার ৭২৯ কোটি টাকার শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। এক বছরে এত শুল্ক ছাড়, এর আগে কখনোই দেওয়া হয়নি এমনটিই মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, নির্বাচনের আগের বছরে নিজেদের পক্ষে ব্যবসায়ীদের মন ও সাপোর্ট পাওয়ার জন্য আমদানির বিভিন্ন খাতে এ ধরনের শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল। একই মন্তব্যে এক মত দেন এনবিআরের শুল্ক কর্মকর্তারাও। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শুল্ক-কর ছাড় কমানোর শর্ত ছিল। সংস্থাটি মনে করে, শুল্ক-কর ছাড় যৌক্তিক করা প্রয়োজন। সেই কারণে শুল্ক-কর ছাড় কমানো হয়েছে।
এনবিআরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এক বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি শুল্ক ছাড় পেয়েছে বিদ্যুৎ খাত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে শুল্ক ছাড়ের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। শুল্ক ছাড়ে দ্বিতীয় স্থান মূলধনি যন্ত্রপাতির। এ খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুল্ক ছাড়ের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা।
বিশেষ উৎপাদন খাতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছিল পাঁচ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। প্রতিরক্ষা খাতের সব ধরনের যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয় ৪ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। এ খাতের পরে আছে শিল্প কাঁচামাল। এ খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুল্ক ছাড়ের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি কৃষি খাতে দুই হাজার ৬৪২ কোটি টাকা, বিশেষ আমদানি ব্যক্তি ও সংস্থা খাতে এক হাজার ৩০৮ কোটি টাকা, বিবিধ খাতে ৮৬১ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য খাতে ৪৭৫ কোটি টাকা শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এনবিআর সাধারণ আদেশে ৭০১ কোটি টাকা এবং বেপজা, বেজা, হাইটেক পার্ক খাতে ১০৯ কোটি টাকার শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গত তিন অর্থবছরে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়, সেটির হিসাব করেছে এনবিআর। এর ভিত্তিতে এনবিআরের শুল্ক বিভাগ সম্প্রতি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। তাতে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৩ হাজার ৭২৯ কোটি টাকার শুল্ক ছাড়া দেওয়া হয়, যা আগের বছরের তুলনায় পাঁচ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা বেশি। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে শুল্ক ছাড়ের পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। সেটি ছিল তার আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে পাঁচ হাজার ২২১ কোটি টাকা বেশি। সেই অর্থবছরে ২৩ হাজার ৩ কোটি টাকা শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়।