অনলাইন রিটার্নের ৬৬ শতাংশই শূন্য কর : এনবিআর চেয়ারম্যান

চলতি করবর্ষে অনলাইন রিটার্নের মধ্যে ৬৬ শতাংশই শূন্য রিটার্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। সোমবার (২৪ মার্চ) আগারগাঁওয়ের এনবিআর আয়োজিত ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান এ তথ্য জানান।
এবারে ১৫ লাখ অনলাইন রিটার্ন জমা পড়েছে জানিয়ে আবদুর রহমান খান বলেন, এর মধ্যে মধ্যে ১০ লাখ করদাতা সাড়ে ৩ লাখ টাকার নিচে রয়েছে। এর মানে আমরা সঠিকভাবে করদাতাদের শনাক্ত করতে পারছি না। চলতি অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কাঙ্খিত কর আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের অবশ্যই রিটার্ন খতিয়ে দেখতে হবে, যারা কর প্রদান করছেন না, তাদের প্রকৃতপক্ষে করযোগ্য আয় নেই কিনা। আমাদের কর ফাঁকি শনাক্ত করার দিকে আরও মনোযোগী হতে হবে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে ব্যক্তিগত করদাতাদের কর ছাড়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকার করার প্রস্তাব দেন। এ প্রসঙ্গে আবদুর রহমান খান বলেন, আমরা সাড়ে তিন লাখ থেকে ৪ লাখ বা ৫ লাখ টাকা করার বিষয়টি যৌক্তিক মনে করি। তবে এখন আমরা যদি শূন্য রিটার্নের সীমা বাড়িয়ে চার লাখ করি, তাহলে শূন্য রিটার্নের সংখ্যা আরও এক লাখ বাড়বে।
ইআরএফ এবারে বাজেট প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- বাজেটে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রশ্রেণির ওপর করের বোঝা কমাতে বাড়তি দেওয়া কর ফেরতের ব্যবস্থা করা; নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, শিক্ষা ও চিকিৎসা উপকরণে করহার পাঁচ শতাংশে সীমিত রাখা; ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশে পৃথক রাজস্ব নীতিপ্রণয়ন; বাজেটে স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব পরিকল্পনা করাসহ বরাদ্দ রাখা; বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডকে করমুক্ত রাখা; প্রান্তিক করদাতাদের জন্য ডেডিকেটেড ডিজিটাল সার্ভিস; তামাকের কর বাড়িয়ে কর আদায় থেকে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো; ব্যক্তি করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ করা; ভ্যাটের হার ৭ শতাংশ করা; বাজার মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে সম্পদ কর আদায়; পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইনসহ মিডিয়ার করহার কমিয়ে আনা; রাজস্ব বোর্ডের তিনটি বিভাগের জন্য পৃথক হেল্পলাইন নম্বর চালু করা; কাস্টমসের টাইম রিলিজ স্টাডির মতো আয়কর ও ভ্যাটেও একই রকম স্টাডি করা; এনবিআরে তিনটি বিভাগের ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগ যাতে বিনিয়োগকারী ও সেবা প্রত্যাশি করদাতারা সহায়তা পান; শতভাগ বেতন প্রদান ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে না করে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদে দেওয়ার সুযোগ রাখা আগামী পাঁচ বছর; চট্টগ্রাম, বেনাপোল ও মংলা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নারীবান্ধব করা; প্রত্যক্ষ করের দিকে জোর দেওয়া এবং সমন্বিত ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম হাতে নেওয়া।
যেখানে বেশি কর, সেখানে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) মতো করদাতা ইউনিট বা এমটিইউ খোলা; করছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও জবাবদিহি দেওয়া; মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ব্যক্তি করদাতাদের কর ছাড়ের সীমা ৪ লাখে উত্তীর্ণ করা; এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ইমপোর্ট ট্যারিফ ব্যবস্থায় কাঠামোগত পরিবর্তন করে ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা; এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগকে আধুনিক, যুগোপযোগী, দক্ষ করতে দক্ষ জনবল নিয়োগসহ এজন্য বিনিয়োগ বাড়ানো; পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর আবগারী শুল্ক প্রত্যাহার এবং মুনাফার ওপর কর কমানো; বড় ঋণ অনুমোদনের আগে এনবিআরের নির্দিষ্ট ডাটাবেজ থেকে ব্যবসায়িক তথ্য নেওয়া বাধ্যতামূলক করা; হয়রানিমুক্তভাবে কর পরিশোধের লক্ষ্যে সব পর্যায়ে বাধ্যতামূলক অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা; দেশের টাকা পাচার ও করফাঁকি রোধে এনবিআরের কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি করা; রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্য সম্ভাবনাময় খাত যেন তৈরি পোশাক শিল্পের মতো নিয়মিত বন্ডেড সুবিধা পায় সে ব্যবস্থা করা; পরিবেশবান্ধব বা সবুজ শিল্পায়নে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এনবিআর সাধারণ কারখানা ও পরিবেশবান্ধব শিল্পের মধ্যে করপোরেট করের ব্যবধান কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ রাখা; আমাদের কৃষি যান্ত্রিকরণের জন্য মেশিনারি ও এর যন্ত্রাংশের শুল্ককর মুক্ত আমদানি সুযোগ দেওয়া; দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার আধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানিও শুল্ককর মুক্ত রাখাসহ এনবিআরের বিভিন্ন প্রজেক্টের প্রচারণার খাতে অর্থনীতি সাংবাদিকদের সম্পৃক্ত করা, যাতে সঠিক তথ্য জনগণ জানতে পারে ও গুজব ছড়িয়ে না পড়তে পারে।