বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে : ড. জাহিদ
অন্তর্বর্তী সরকার যদি তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক কার্যক্রমের এক-চতুর্থাংশও বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে অর্থনীতি ‘ঘুরে দাঁড়াবে’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেন ড. জাহিদ।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আগামী বাজেট (২০২৫-২৬ অর্থবছর) শেষে আমরা নিশ্চিত হতে পারব যে, অর্থনীতিকে দ্রুত বৃদ্ধি করার জন্য কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যদি অল্প সময়ের মধ্যে পরিকল্পিত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন যায়, তাহলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা যায়।’
অর্থনীতির প্রধান বাধা সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন বলেন, আর্থিক খাত, জ্বালানি খাত ও বিনিয়োগের পথে ব্যবসায়িক নিয়মকানুনের মতো বাধাগুলো অর্থনীতির জন্য বড় প্রতিবন্ধক। এ প্রসঙ্গে তিনি ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর (এনএসডব্লিউ) অগ্রগতির প্রশংসা করেন, যা আমদানি ও রপ্তানি প্রক্রিয়ার জটিলতা মোকাবিলার মাধ্যমে ব্যবসার সময় ও খরচ সাশ্রয় করবে।
ড. জাহিদ হোসেন সরকারকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে লাইসেন্স ও সার্টিফিকেশন ডিজিটাল প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন এবং এটি ম্যানুয়াল সিস্টেম থেকে রূপান্তর করার সময় সঠিকভাবে কার্যকর রাখার ওপর জোর দেন।
ড. জাহিদ বলেন, ‘একক উইন্ডো কার্যকর না হওয়ার কারণ উদ্যোগের অভাব নয়, বরং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দৃশ্যমান প্রতিরোধ। সেই চরিত্র একই রয়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি ডিজিটাল ও বিশ্বাসযোগ্য না হবে, ততক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে এটি সঠিক দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।’
বর্তমান অর্থবছরে (২০২৪-২৫) এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহের গতির বিষয়ে জানতে চাইলে ড. জাহিদ বলেন, অর্থনীতি বেশিরভাগ সময় স্থবির থাকায় প্রথম ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। তিনি বলেন, ‘রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে এনবিআরে বিশেষ করে কর নীতি এবং প্রশাসনে সংস্কার প্রয়োজন।’
চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মেয়াদে রাজস্ব সংগ্রহ দুই দশমিক ৬২ শতাংশ কমে এক লাখ ৩০ হাজার ১৮৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। শুধু নভেম্বরেই রাজস্ব সংগ্রহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আট দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে ২৫ হাজার ৩৬০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এছাড়াও, এনবিআর তাদের প্রথম পাঁচ মাসের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩৮ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
ড. জাহিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, দ্রুত রাজস্ব বাড়ানোর জন্য ১০০টিরও বেশি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সাম্প্রতিক পদক্ষেপটির ফল স্পষ্টত উল্টো হয়েছে। এই পদক্ষেপটি দৃশ্যত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) সন্তুষ্ট করার জন্য নেওয়া হয়েছিল, তবে এখন সরকার কিছু ক্ষেত্রে পিছু হটায় আইএমএফও হতাশ হতে পারে।
ড. জাহিদ আরও বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে এবং এটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ছিল না।