এইও সিস্টেম চালু করল এনবিআর

ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সিস্টেমের শুভ উদ্বোধন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আজ রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এইও সিস্টেম চালু করল এনবিআর।
এতে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা আরও সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত হবে বলে ধারণা সবার।
এইও সিস্টেমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। প্রধান অতিথি লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয়টি প্রতিষ্ঠানকে এইও ক্রেস্ট বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
এইও প্রতিষ্ঠানগুলোর অটোমেটেড পদ্ধতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রণীত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) অনুসরণ করে আমদানি করা পণ্য অতি দ্রুত খালাসে এবং রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নে বিশেষ সুবিধা প্রাপ্য হবে। এখন থেকে এইও লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ২০ শতাংশ পণ্য চালান স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেরাই শুল্কায়ন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কাস্টমসের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই এইও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই এর মাধ্যমে শুল্ক-করাদি পরিশোধ করে সরাসরি জাহাজ থেকে আমদানি করা পণ্য নিজেদের গুদামে নিতে পারবে। এ ছাড়া এইও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য চালানগুলোর ৫০ শতাংশের কম পণ্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতাধীন থাকবে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের যেসব পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা প্রয়োজন সেসব পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়াই সাময়িক শুল্কায়ন করে খালাস করতে পারবে, অগ্রিম রুলিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। যেক্ষেত্রে ব্যাংক গ্যারান্টির প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ ব্যাংক গ্যারান্টি এবং ২৫ শতাংশ অঙ্গীকার প্রদানের মাধ্যমে মালামাল খালাসের সুবিধা পাবে। এতে আইন মান্যকারী করদাতা প্রতিষ্ঠানের সময় ও ব্যয় উভয়ই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) কাজী মোস্তাফিজুর রহমান। এইও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিস রূপালী হক চৌধুরী এবং ফেয়ার ইলেক্ট্রোনিক্স লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মাদ মেসবাউদ্দিন।
উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে বক্তব্য দেন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং এবং বাংলাদেশ ট্রেড ফেসিলিটেশন প্রজেক্টের চিফ অব পার্টি মাইকেল জে পার। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট জাভেদ আক্তার।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে এইওর সনদ প্রদান এবং তা কার্যকর করার মাধ্যমে বাংলাদেশে ট্রেড ফেসিলিটেশনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বলে উল্লেখ করেন। এইওর যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কমপ্লায়েন্ট আমদানি ও রপ্তানি কারকরা সময় ও খরচ কমানোর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশে এইও চালু করায় এনবিআরকে ধন্যবাদ জানান।
আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা পণ্য চালান আমদানি-রপ্তানির আগেই অফিসে বসে তার আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের এইচএস কোড, ট্যারিফ, হিসাব, কোন কোন রেগুলেটরি সনদের প্রয়োজন, এরূপ পণ্য আমদানির বা রপ্তানির ক্ষেত্রে কী কী সুবিধা বিদ্যমান এবং বিশেষ কোনো শর্ত আছে কি না–তা যেন সহজে জানতে পারেন সে লক্ষ্যে এনবিআর কর্তৃক ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট হাব নামক পৃথক একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করা হয়েছে। প্রধান অতিথি এই অনুষ্ঠানেই অনলাইন পোর্টালটি শুভ উদ্বোধন করেন। অনলাইন পোর্টালটি ইউএসডিএর অর্থায়নে প্রস্তুত করা হয়। অনুষ্ঠানে ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট হাবের ওপর একটি উপস্থাপনা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এনবিআর কর্তৃক ২০২৪-২০২৮ সময়কালের জন্য প্রণীত কাস্টমস স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজীকরণ, ব্যয় হ্রাসকরণ ও পণ্য খালাস পদ্ধতি সহজীকরণ এবং বৈধ ট্রেডকে সহযোগিতা ও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এনবিআর কর্তৃক ডব্লিউসিও ও ডব্লিউটিওর নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কৌশল, পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনার আদলে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ২ জানুয়ারি বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডোর শুভ উদ্বোধন করা হয়। যার মাধ্যমে গত এক মাসে সাতটি রেগুলেটরি অথরিটি অনলাইনে এক লাখের বেশি সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট ইস্যু করেছে। বিএসডব্লিউ, এইও, ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট হাব, কাস্টমস স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ২০২৪-২০২৮ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে মর্মে এনবিআর আশা প্রকাশ করে।