করোনায় কঠিন হবে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সামনের দিনেও অর্থনীতিতে ঝুঁকি থাকবে উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগামীতে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া কঠিন হবে। আজ মঙ্গলবার সিপিডি আয়োজিত 'করোনা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় এসব বলেন তাঁরা। বিনিয়োগ না বাড়লেও দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিভাবে বাড়ছে সে প্রশ্নও তোলেন অনেকে।
স্থানীয় পর্যায়ে সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে সমস্যা চিহ্নিত করা ও পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করা হয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। করোনা মহামারির কারণে এ বছরের জুনের বদলে আসছে বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নেওয়া হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। সেখানে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব পেতে পারে তা উঠে আসে সিপিডির এই ভার্চুয়াল আলোচনায়।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রাজস্ব আহরণ বলি, আমদানি বলি, রপ্তানি বলি, কর্মসংস্থান নতুন সৃষ্টির কথা বলি, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের কথা বলি, বৈদেশিক বিনিয়োগের কথা বলি, এগুলোতে কিন্তু আমাদেরই যে টার্গেট করেছি আমরা তার সাথে কিন্তু বাস্তবে যে অর্জন করেছি, তার পার্থক্য কিন্তু ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এবং এটা কোভিড পূর্ববর্তী বছর পর্যন্ত বেড়েছে, কোভিডে সেটা আরো ঘণীভূত হয়েছে।’
বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘প্যানডেমিকের কারণে এসডিজির যে এজেন্ডাটা সেটাতে একটা বড় ধরনের আঘাত এসেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এনডিসির ট্রানজেশন এটা আগামী পাঁচ বছরের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে।’
এ সময় গেল বছরগুলোতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না পেলেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিভাবে বাড়ছে সে প্রশ্নও তোলেন অনেকে?
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়ছে না, স্থবির। এফডিআই বাড়ছে না, কিন্তু গ্রোথ বেড়ে যাচ্ছে। এটার একটা যোগসূত্র কিন্তু আমরা পাচ্ছি না। সেই জায়গাটায় একটা স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন আছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ফরেন ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে না। তো এগুলো করতে হলে তো আপনাকে একটা ক্রেডিবল ইলেকটেড গভর্নমেন্ট লাগবে। এই যে দেশে বিদেশ থেকে টাকা যাচ্ছে। এই টাকাগুলো তো এইসব প্রজেক্ট থেকে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে কিন্তু তারা বের করে টাকাগুলো এখানে পার করতে পারছে না বলে টাকাগুলো বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। অনেকে জিজ্ঞাসা করছে, এদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে না কেন? এদের বিরুদ্ধে তো অ্যাকশন নেওয়া হবে না। দে আর পার্ট অব দ্যা রেজিম।’
তবে সরকার সঠিক পথেই আছে বলে দাবি করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ‘আমরা কনসিডেন্টলি ওয়ে অন দ্যা রাইট ট্র্যাক। ইন দেট সেস যে আমরা নিচের যে লেবেলটার কথাটা বললাম, ষষ্ঠী। সেই ষষ্ঠীর মাত্রাটা আরেকটু বাড়াতে চাচ্ছি আমরা।’
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের ধারণা এ বছর বাইরের সাপোর্টটা বিশ্ব পরিস্থিতি সত্ত্বেও বোধহয় আগের চেয়ে কমবে না।’ করোনাকে মোকাবিলা করেই পদ্মা সেতু, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রাও সরকার পূরণ করতে চায় বলে জানান তিনি।