ইবির ছাত্রী নির্যাতনে অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে মশাল মিছিল
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিতে মশাল মিছিল করেছে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। গতকাল সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিয়া মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলে ‘নারী নির্যাতনে জড়িতদের, বহিষ্কার করো, করতে হবে’, ‘র্যাগিংকারীদের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলে সংগঠনের সভাপতি ইমানুল সোহান, সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমানসহ অন্যন্য নেতারা অংশ নেন।
এদিকে নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগনেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচজনকে আগামী ১ তারিখ থেকে হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। ফুলপরী বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলে থাকার যোগ্য নন। কারণ, তাঁরা হলে থাকলে এ রকম আরও খারাপ কাজ করবেন। এটা পাওয়ার যোগ্য তারা।’
ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণকরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সবধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
সোমবার দুপুরে তদন্ত কমিটির দাখিল করা রিপোর্টের পর্যালোচনা সভায় ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচজনকে আগামী ১ তারিখ থেকে হল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল কর্তৃপক্ষ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. শামসুল আলম। তার স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয়েছে, সভায় ড. মো. আহসানুল হক, ড. মো. নূরুল ইসলাম, ইসরাত জাহান, আসমা সাদিয়া রুনা ও মৌমিতা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, প্রভোস্টের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অভিযোগকারী মোছা. ফুলপরী খাতুন (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, সেশন: ২০২১-২০২২) এর আবেদনে উল্লিখিত র্যাগিংয়ের নামে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। প্রাপ্ত সত্যতার ভিত্তিতে সানজিদা চৌধুরী অন্তরা (পরিসংখ্যান বিভাগ, সেশন: ২০১৭-২০১৮), হালিমা আক্তার ঊর্মি (চারুকলা বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১), ইসরাত জাহান মিম (আইন বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১), তাবাসসুম ইসলাম (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১), মুয়াবিয়া জাহান (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১)-কে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিকতা বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। তাদের আগামী ০১ মার্চ দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলো।
একই সঙ্গে ওই পাঁচজনকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের হল সংযুক্তি বাতিলের সুপারিশ কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মির বিবৃতিতে উল্লিখিত তার হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। তিনি অভিযোগে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা নির্যাতন চালিয়েছেন। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, মারধর, গালাগাল, হত্যার হুমকিসহ অমানবিক নির্যাতন করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মোট চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যেই সবগুলো কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে।