৪১ বছর বিনা পারিশ্রমিকে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন হাফেজ আব্দুল হান্নান

মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন হলো একটি চিরন্তন, শাশ্বত এবং পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানুষের সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাদের উপর আসমানি কিতাব নাজিল করা হয়েছে। এই সমস্ত কিতাবের মধ্যে আল কোরআনই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ কিতাব হিসেবে গণ্য হয়। কোরআনের নির্দেশনা অনুসরণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ।
এই মহাগ্রন্থের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ৪১ বছর ধরে নিরবভাবে পরিশ্রম করছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের বাসিন্দা হাফেজ আব্দুল হান্নান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিরপুর পৌরসভার সুলতানপুর গ্রামে মানুষকে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন। প্রতিদিন বিরামহীনভাবে এই মহান কাজটি আনন্দের সঙ্গে করে যাচ্ছেন আব্দুল হান্নান। অথচ তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন না, শুধুমাত্র আল্লাহর রাস্তায় এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করছেন।
হাফেজ আব্দুল হান্নান জানান, প্রথম দিকে তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরআন পড়া শেখাতেন। পরে ১৯৮৪ সালে বাড়ির উঠানে গ্রাম্য ছেলেমেয়েদের কোরআন শেখানো শুরু করেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ১৯৮৬ সালে তিনি বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে একটি মাটির ছাপরা ঘর তৈরি করেন এবং সেখানে শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন। এরপর ১৯৯৫ সালে তার বাবা আব্দুল আজিজ শেখ মক্তব ঘর গড়ার জন্য এক কাঠা জমি দেন এবং সেখানে একটি মক্তব স্থাপন করেন। এই মক্তবের মাধ্যমে তিনি নিজের গ্রাম ছাড়াও আশপাশের কয়েক হাজার মানুষকে বিনা পারিশ্রমিকে কোরআন শিখিয়েছেন।
এই কোরআনে হাফেজ বলেন, বাড়ির সেই মক্তব ঘরটি এখন না থাকলেও বর্তমানে আমি তিনটি স্থানে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছি। এরমধ্যে সুলতানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থান, মিরপুর টুইন কোয়ার্টার ও বাজারপাড়া ওয়াক্তেয়া মসজিদ। এই তিনটি স্থানে প্রতিদিন নিয়ম করে কোরআন শিক্ষা দেওয়া হয়।
হাফেজ আব্দুল হান্নান বলেন, নিজ গ্রাম ছাড়াও আশপাশের এলাকার অনেক মানুষকে বিনা সম্মানিতে কোরআন শিখিয়েছি। যারা কোরআন শরীফ কেনার সামর্থ্য রাখেন না, তাদের আমি বিনামূল্যে পবিত্র কোরআন উপহার দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ‘যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন এই কাজটি করে যেতে চাই।’
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সরেজমিনে সুলতানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের মক্তবে গিয়ে দেখা যায়, কবরস্থানের প্রবেশপথে ঢুকতেই গাছের ছায়ায় বসে কিছু কোমলমতি শিক্ষার্থী কোরআন পড়া শিখছেন। এখানে শিশু শিক্ষার্থী ছাড়াও কয়েকজন বৃদ্ধা নারীকে দেখা যায়, যারা নিয়মিতভাবে এখানে কোরআন পড়া শিখতে আসেন। এটি সবার জন্য এক আদর্শস্থানীয় শিক্ষা কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় জালাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জানান, হাফেজ আব্দুল হান্নান দীর্ঘদিন ধরে সুলতানপুর গ্রামে কোরআন শিক্ষা দিয়ে আসছেন। এই গ্রাম ছাড়াও আশপাশের অনেক গ্রাম থেকে তার কাছে কোরআন শরীফ শিখতে আসেন। এমনকি আমার সন্তানও তার কাছ থেকে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
হাফেজ আব্দুল হান্নান জানান, নিজের গ্রাম সুলতানপুর ছাড়াও আশপাশের এলাকায় কোনো পুরুষ মারা গেলে তার দাফন-কাফন, গোসল ও জানাজাসহ সব কাজে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমামতি করেন। মসজিদের সামান্য হাদিয়া ও নিজের দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়া তিনটি মক্তব চালানোর জন্য স্থানীয় কিছু মানুষ আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেন।