টিউশনি করে চলতেন, দিতেন পরিবারেও, শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে তাঁদের পাশে দাড়াল সময় জার্নাল
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/05/25/2222.jpg)
মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তারের ফলে চলমান অচলাবস্থায় আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন কবি ও গবেষক ইমরান মাহফুজ ও সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময় জার্নাল। মেধাবী ও দরিদ্র্য শিক্ষার্থীদের নাম পরিচয় গোপন রেখে দেওয়া হয় ‘সংকটকালীন শিক্ষাবৃত্তি’।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসার যেসব শিক্ষার্থী টিউশনি অথবা পার্ট টাইম চাকরি করে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকে সহযোগিতা করতেন, লকডাউনের কারণে তাঁরা এখন গৃহবন্দি। ফলে নিজের ন্যূনতম উপার্জন বন্ধ। টান পড়েছে পরিবারেও। আর্থিক সংকটে থাকা এসব শিক্ষার্থীর পক্ষে ভিড় ঠেলে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নিজের প্রয়োজনের কথা অন্যের কাছে বলতেও পারছেন না তাঁরা। এমন অবস্থার শিক্ষার্থীদের জন্য ‘সংকটকালীন শিক্ষাবৃত্তি’। এরই মধ্যে ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে তিনটি ধাপে বিকাশ নম্বরে শিক্ষাবৃত্তির টাকা পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি টিউশনি করে নিজের খরচের পাশাপাশি পরিবারকেও সহায়তা করতাম। করোনার এ পরিস্থিতির কারণে টিউশনি না থাকায় খুবই সংকটে দিন পার করছি। লজ্জায় কারো কাছে বলতেও পারছি না। কিন্তু সময় জার্নাল ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রেখে যেভাবে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘করোনায় লকডাউনের কারণে হঠাৎ করে টিউশনি বন্ধ হয়ে যায়। বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। শিক্ষাবৃত্তির কথা জানতে পেরে আবেদন করি। তিন দিন পরে দেখি একটি বিকাশ নাম্বার থেকে টাকা এসেছে। পরে জানতে পারলাম এটাই সেই শিক্ষাবৃত্তির টাকা।’
শিক্ষাবৃত্তির পরিচালক কবি ও গবেষক ইমরান মাহফুজ বলেন, ‘করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার পাশাপাশি আয়ের পথও বন্ধ হয়ে যায়। মানবিক বিবেচনায় এই কঠিন মুহুর্তে তাদের পাশে দাঁড়াতে আমরা ‘সংকটকালীন শিক্ষাবৃত্তি’র উদ্যোগ নিই। এতে আমরা সারাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। প্রথমত, এটি ত্রাণ বা সাহায্যের মতো ছিলো না। আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য সম্মানসূচক সম্বোধন করে নামকরণ করেছি। দ্বিতীয়ত, কলেজ মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা না ভেবে সবাইকে শিক্ষার্থী হিসেবে সমান গুরুত্ব দিয়েছি। তৃতীয়ত, ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক কার্যক্রমের বাইরে আমাদের এ উদ্যোগ ছিল দেশব্যাপী। যার ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে সম্মানিত বোধ করে আমাদের এ শিক্ষাবৃত্তির প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে, আপনাদের শিক্ষার্থীদের একটু খোঁজ খবর নিন। আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।’
বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে যেসব প্রতিনিধিরা অনেক শ্রম দিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য সরবরাহ ও যাচাইয়ের কাজ করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান ইমরান মাহফুজ।
শিক্ষাবৃত্তির আরেক পরিচালক এনটিভি অনলাইনের নিউজরুম এডিটর ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়েছি। আরো একশর মতো বৃত্তিপ্রার্থীর তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে। আশা করি শিগগিরই তাদেরকেও দিতে পারব। এ ছাড়া প্রতিদিন অনেক শিক্ষার্থী তাঁদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে আমরা আরো বড় পরিসরে অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে পারবো। দেশের এ ক্রান্তিকালে বিত্তবানদের একটু সাহায্য ও সহযোগিতায় অসহায় শিক্ষার্থীরা হয়তো এ দুর্যোগ সামলে নিতে পারবেন।’
সময় জার্নাল পরিবারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান শিক্ষাবৃত্তির উদ্যোক্তা ইমরান মাহফুজ ও ইয়াসির আরাফাত। এ ছাড়া পাশে দাড়ানোয় ইন্সপায়রিং বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ জানান উদ্যোক্তারা।
শিক্ষাবৃত্তির অন্যতম সমন্বয়ক ডা. মাকিন উল্লাহ বলেন, কাজটির সঙ্গে জড়িত থাকতে পেরে আমাদের ভাল লেগেছে। কর্মজীবনে প্রবেশেরে আগেই শিক্ষাজীবনে যাদের কাধে বড় দায়িত্ব পড়ে যায় তাদের পাশে থাকাটা অনেক জরুরি ছিল।
শিক্ষাবৃত্তিতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার একান্ত সহকারী (সিনিয়র সহকারী সচিব) মো. তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যারা আর্থিক সংকটে থাকেন, পরিবারের প্রতি খেয়াল রেখে পড়াশোনা চালিয়ে নেন তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ায় এ উদ্যোগটি আমার ভাল লেগেছে। সবাইকে বলব, যার যার জায়গা থেকে আমরা যেন এ সংকটে আশপাশের মানুষগুলোর খেয়াল রাখি।’
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এবং যাদের বাবা বা উপার্জনক্ষম অভিভাবক জীবিত নেই এবং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ও কর্মহীন, তাদেরও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বৃত্তির আয়োজকরা। সংকটকালীন শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রমে আপনিও অংশ নিতে পারেন। সহযোগিতা করতে চাইলে আপনার অনুদান পাঠিয়ে দিন।
বিকাশ: ০১৭১৮-৪৮৩৬৫৮, ০১৯১৩-৩৭৩৫৮১
ব্যাংক একাউন্ট
Yeasir Arafat, ০১৭০২৭১০৫০০৩১, আইএফআইসি ব্যাংক, কারওয়ান বাজার শাখা
প্রয়োজনে যোগাযোগ: ০১৭১৮-৪৮৩৬৫৮ (ইয়াসির আরাফাত), ০১৭৬৫-৩০৭০৭০ (ইমরান মাহফুজ)