সোমবারও ক্লাস হয়নি রাজশাহী পলিটেকনিকে, গ্রেপ্তার ৯

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরো চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল রোববার রাতে নগরীর বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তিনজনকে এবং চন্দ্রিমা থানা পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। তবে এজাহারভুক্ত সাত আসামির কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মহানগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত নয়জনই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। সিসি টিভির ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা হলেন নগরীর আসাম কলোনির মেহেদী হাসান হীরা (২৩), মেহেদী হাসান আশিক (২৩), সাধুর মোড় এলাকার নাবিউল উৎস (২০) ও ছোটবনগ্রাম এলাকার মো. নজরুল ইসলাম (২৩)। তারা সবাই রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।’
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের ধরতে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওসি।
এদিকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যে পুকুরে অধ্যক্ষকে ফেলে দিয়েছিল, সেই পুকুরের পানির গভীরতা পরিমাপ করে ১৫ ফুট পানি পেয়েছেন তারা। এ ছাড়া ছাত্রলীগের টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত ১১১৯ নম্বর কক্ষটি রোববার রাতে পরিদর্শন করেছেন। এ সময় সেখান থেকে উদ্ধার করা বেশ কয়েকটি বাঁশের লাঠি ও লোহার পাত আলামত হিসেবে জব্দ করেছে পুলিশ।
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটিও সোমবার ইনস্টিটিউটে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। ছাত্রলীগ বলছে, শিক্ষকের লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের তারা কোনোভাবেই ছাড় দেবে না। এরই মধ্যে একজনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। জড়িত অন্যদেরও চিহ্নিত করে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে।
এদিকে, অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে রোববার রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল থাকলেও সোমবার সকাল থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেভাবে সক্রিয় ছিল না। সকাল থেকে ১৮ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের পাশে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসেছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা বলেছে, আগের দিন আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগের নামে তাদের মুঠোফোনে আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হুমকির বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেলে নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তারা সোমবার ক্যাম্পাসে আসেনি।
প্রসঙ্গত, মিডটার্ম পরীক্ষায় ফেল এবং ক্লাসে অনুপস্থিত থাকায় দুজন শিক্ষার্থীকে ফাইনাল পরীক্ষায় ফরম পূরণের দাবি নিয়ে রাজশাহী পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতাকর্মী অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে। অধ্যক্ষ তাদের দাবির মেনে না নিলে দুপুরে তাকে লাঞ্ছিত করার পর টেনেহিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়।
এ ঘটনায় রাতে মামলা করেন অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ। এতে সাতজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল অভিযুক্ত রাজশাহী পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।