‘দ্য সেলিং সলিউশন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/06/12/photo-1434126662.jpg)
দেশের পেশাজীবীদের মানোন্নয়নে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো বিক্রয়বিষয়ক আন্তর্জাতিক কর্মশালা ‘দ্য সেলিং সলিউশন’। আজ শুক্রবার দিনব্যাপী রাজধানীর গুলশান ২-এ হোটেল সিক্স সিজনের কনফারেন্স রুমে ‘দ্য সেলিং সলিউশন’ কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। লিডস টেকনোলজি লিমিটেড আয়োজিত এই কর্মশালা পরিচালনা করেন বিক্রয়বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও লেখক টম অ্যাবট। আর কর্মশালায় মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল এনটিভি অনলাইন।
জাতীয়তায় কানাডীয় টম অ্যাবট ছয় বছর ধরে সিঙ্গাপুরে আছেন। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ ওশেনিয়া ও এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশেই তিনি বিক্রয়ের ওপর কর্মশালা পরিচালনা করেছেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, এইচপি, সিঙ্গটেল, ওমেগা, ইলেকট্রোলাক্স, টাটা, ফুজিসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন টম অ্যাবট। বিক্রয় বিষয়ে তাঁর লেখা দুটি বই হলো ‘দ্য এসওএইচও সলিউশন’ (The SOHO Solution) ও ‘সোশ্যাল সেলিং : দি ইভোলিউশন অব সেলস’ (Social Selling : The Evolution of Sales)।
শুক্রবার সকাল ৯টায় ‘দ্য সেলিং সলিউশন’ শীর্ষক কর্মশালা শুরু হয়। ব্যাংক, বীমা, প্রযুক্তি সেবাদাতা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে শীর্ষপর্যায়ের প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা কর্মশালায় অংশ নেন। কোনো পণ্য বা সেবা কীভাবে একজন ভোক্তার কাছে উপস্থাপন করতে হবে, কীভাবে স্বল্পতম সময়ে ও সাফল্যের সঙ্গে পণ্য বা সেবার ব্যাপারে ভোক্তাকে সন্তুষ্ট করা যাবে—এসব বিষয়ে আটটি ধাপে প্রশিক্ষণ দেন টম অ্যাবট। পণ্য বা সেবা নিয়ে ভোক্তার সঙ্গে আলোচনায় আসতে পারে এমন বিষয়গুলো উল্লেখ করে এর সহজ সমাধান তুলে ধরেন তিনি। তাঁর অনবদ্য উপস্থাপনা ও বক্তৃতায় কর্মশালার পুরো সময়টিই ছিল প্রাণবন্ত।
কর্মশালা শেষে টম অ্যাবট এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এই প্রশিক্ষণের লক্ষ্য হলো অংশগ্রহণকারীদের বিক্রয় বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানো। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া অনেকেই বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা করপোরেট ও এন্টারপ্রাইজ সেলসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। এই প্রশিক্ষণে এসে তাঁরা নিজেদের দক্ষতাকে আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেলেন। টম অ্যাবট আরো বলেন, আগামী আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বরে সোশ্যাল সেলিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিতে তিনি আবার বাংলাদেশে আসছেন। নিজের বই সম্পর্কে অ্যাবট বলেন, চার বছর আগে প্রকাশিত ‘দ্য এসওএইচও সলিউশন’ (The SOHO Solution) বইটি ছিল ক্ষুদ্র পর্যায়ে ব্যবসা গড়ে তোলা নিয়ে। কয়েক মাস আগে তাঁর প্রকাশিত দ্বিতীয় বই ‘সোশ্যাল সেলিং’ (Social Selling)-এর বিষয়বস্তু হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা। তিনি মনে করেন, ভোক্তার জীবনধারা যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও সেভাবে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। টম অ্যাবট আরো জানান, এন্টারপ্রাইজ ও করপোরেট সেলস এবং সেলসে নেতৃত্ব নেওয়ার বিষয়ে তিনি দুটি বই লিখছেন।
আয়োজক লিডস টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মুশফিকুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আন্তর্জাতিক এই কর্মশালা থেকে সব ধরনের পেশাজীবীরা তাঁদের নিজেদের কাজের মানোন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে ভূমিকা রাখতে পারবেন। তিনি আরো জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে দেশের পেশাজীবীদের মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ আয়োজন করে। দুইভাবে এসব কর্মশালা আয়োজন করা হয়। প্রথমত, বিশেষায়িত কর্মশালা যেখানে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়গুলো ঠিক করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দ্বিতীয়টি হলো সাধারণ কর্মশালা, যেখানে সব ধরনের পেশাজীবীরাই অংশ নিতে পারেন। সবারই কাজে লাগে এমন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় এমন কর্মশালায়। ‘দ্য সেলিং সলিউশন’ শীর্ষক আজকের কর্মশালাটি সাধারণ, তাই সব পেশাজীবীর দক্ষতা উন্নয়নে এটি কার্যকর হবে।
লিডস করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচালক শেখ শহীদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে বিক্রয়নির্ভর অনেক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। এ কারণে বিক্রয়ের কাজটি অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে সম্পন্ন হয় না। এর ফলে কর্মচারীরাও যেমন সমস্যায় পড়েন, তেমনটি প্রতিষ্ঠানেও তাঁদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।
বিদেশ থেকে প্রশিক্ষক এনে কর্মশালা আয়োজনের প্রসঙ্গে শেখ শহীদ বলেন, বাংলাদেশে অনেক প্রশিক্ষক আছেন। তবে ১৮ বছর বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রশিক্ষকরা তুলনামূলকভাবে অনেক দক্ষ। তিনি বলেন, এর আগেও লিডসের পক্ষ থেকে মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষক দিয়ে কর্মশালা আয়োজন করা হয়। আজকের প্রশিক্ষণ পরিচালনাকারী টম অ্যাবট আন্তর্জাতিক অঙ্গনের একজন নামকরা প্রশিক্ষক। আগামীতে দুই মাসের মধ্যেই আবার বিদেশের প্রশিক্ষক দিয়ে কর্মশালা আয়োজন করা হবে। পরবর্তী কর্মশালা আরো কলেবরে আয়োজন করা সম্ভব হবে তিনি আশা করেন।
নিজের প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে শেখ শহীদ বলেন, লিডস করপোরেশন প্রধান কোম্পানি। এর শাখা প্রতিষ্ঠান দুটি—লিডস সফট ও লিডস টেকনোলজি লিমিটেড। লিডস টেকনোলজির পক্ষ থেকেই বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজন করা হয়। তিনি আরো বলেন, লিডস সফট দেশের অন্যতম শীর্ষ সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। দেশের আটটি ব্যাংক, ৯৭টি ব্রোকারেজ হাউস, ৩৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে তাঁদের সফটওয়্যার ব্যবহার হয়। এ ছাড়া বীমাসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্যও তাঁদের সফটওয়্যার আছে। আর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে জাপান, সৌদি আরব, কানাডা ও ডেনমার্কসহ কয়েকটি দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে লিডস সফটওয়্যার সরবরাহ করেছে।