সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ প্রাণ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ পালিত হচ্ছে শোক দিবস। এক যুগ আগে ২০০৪ সালের আজকের দিনে সুন্দরবনের কটকা সৈকতে ভেসে গিয়েছিল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই ছাত্রসহ মোট ১১টি তরুণ প্রাণ।
নবীন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাজানো গোছানো পরিবারের ওপর প্রথম বড়সড় এক আঘাতের দিন ছিল সেটি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ছাত্রছাত্রীদের সবাই ছিলেন স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের। সমুদ্রের মতো মন নিয়ে আকাশছোঁয়ার অঙ্গীকারে সমুদ্রস্নানে গিয়েছিলেন তাঁরা। নেমেছিলেন কটকার সুন্দরসৈকতে। কিন্তু সাগরের প্রকাণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে সম্ভাবনাময় ওই শিক্ষার্থীদের জীবনঘণ্টার কাঁটা থমকে যায়। কটকার নির্জন সৈকতে সলিলসমাধি হয় তাঁদের।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের নয় শিক্ষার্থী এ দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁরা হলেন আরনাজ রিফাত রূপা, মো. মাহমুদুর রহমান, মাকসুমুল আজিজ মোস্তাজী, আবদুল্লাহেল বাকী, কাজী মুয়ীদ বিন ওয়ালী, মো. কাওসার আহমেদ খান, মুনাদিল রায়হান বিন মাহবুব, মো. আশরাফুজ্জামান, মো. তৌহিদুল এনাম। আর বুয়েটের দুজন ছাত্রের নাম সামিউল ও শাকিল। ওই দিনের পর থেকেই প্রতিবছর এ দিনটিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
সেদিন যাঁরা মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে তোহা ভালো গাইতেন, বাজাতেন গিটারও। ভরাটকণ্ঠের মিশুক-বিনয়ী এই ছেলেটির ছিল যে কারো মন জয়ের ক্ষমতাই। ঢাকার বদরুন্নেসা কলেজ থেকে পাস করে খুলনায় পড়তে আসা রূপার শখ ছিল রান্নার। অপুর ছিল দারুণ লেখার হাতি। স্থাপত্য বিভাগের এই নয় বন্ধুই নিজেদের মেধায় কীর্তিতে ছিলেন ভাস্বর। আর তাই এই শিক্ষার্থীদের অকালপ্রয়াণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবেই দেখা হয়।
গত কয়েকদিন ধরেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের আবহ। এই নয় শিক্ষার্থী স্মরণে ক্যাম্পাসে কটকা নামে যে স্মৃতিস্তম্ভ সেখানকার আশপাশের প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত জায়গার গাছগুলোও কালো কাপড়ে মোড়ানো।
রাস্তায় আঁকা সাদাকালো আলপনা, আর আলপনায় লেখা দুঃখগাঁথা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আজও গভীর ভালোবাসায় ধরে রেখেছে অকালপ্রয়াত ওই নয় শিক্ষার্থীর স্মৃতি।
আজও দিনটির স্মরণে শোকে স্তব্ধ গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ই যেন বলে ওঠে, তোমাদের চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়। তোমরা আছ হৃদয়ে।
লেখক : শিক্ষক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।