ছুটির আগেই ছুটি!
কথায় আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দা দিয়ে হাঁটাহাঁটি করলেও নাকি অনেক কিছু শেখা যায়। এখনো অনেকে তাই মনে করেন। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অনেকটাই উল্টো চর্চা। যেকোনো ছুটির ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বন্ধের এক সপ্তাহ আগে থেকে বাড়ি যেতে শুরু করে এবং আসে খোলার এক সপ্তাহ পরে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক সপ্তাহ আগে ও পরে ক্লাস না নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদ ও রোজার ছুটি হওয়ার কথা রয়েছে ৯ জুলাই থেকে। হল বন্ধ হবে এরও কয়েকদিন পর। কিন্তু এখনই ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। এই চিত্র প্রায় সব ছুটিতে চোখে পড়ে।
আগে যাওয়া, পরে আসার কারণ জানতে চাইলে লতিফ হলের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান সুজন বলেন, ‘ছুটির কথা শুনলেই ভাবি বাড়ি যাই। এখানে খাবার-দাবারও তত ভালো না। বাড়িতে গেলে ভালো-মন্দ খাওয়াও যায়। সেই সঙ্গে আরামে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপার তো আছেই। আর আসার সময় মনে হয়, শুরুর দিকে ক্লাস যেহেতু কমই হয়, আবার অনেক সময় হয়ও না। তাই আমিও ভাবি একটু দেরিতেই যাই। মূলত আমার ক্ষেত্রে কাজ করে আগে যাওয়া, পরে আসার ব্যাপারট।’
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরের বিশ্বাস মেসে থাকেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব। এই ছুটিতে তিনি আগেই বাড়ি যাচ্ছেন। হাসিব বলেন, ‘ক্লাস হচ্ছে। কিন্তু বাসায় যাওয়ার আবেগ চলে আসছে। এখন না গেলে ভালো লাগবে না। সব ছুটির ক্ষেত্রেই আমি একটু আগেই যাই। এই যাওয়ার পেছনে তেমন কোনো কারণ নাই। সবাই যায়, তাই একসঙ্গে চলে যাই। আর বাড়িতে গেলে তো কয়েকদিন সেই আড্ডা হয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কত তাড়াতাড়ি বাড়িতে যাবে এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আগে বাড়িতে যাওয়া, পরে আসা তাদের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য শিক্ষার্থীদেরই আত্মসচেতন হতে হবে। আর শিক্ষকরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্লাস নেওয়া বাদ দেন কি না এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
এ ব্যাপারে বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. শহীদ ইকবাল বলেন, ‘এই সমস্যাটা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। এটা আর কিছু না মফস্বলতা। এই শিক্ষার্থীরা এখনো বাস্তববাদী না। বাড়িতে গেলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা খুবই কম হয়। যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হয়, সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা থাকে। তবে তারা পড়াশোনা করার জন্য থাকে না। থাকে টিউশনি, শপিংমলে কাজ করা কিংবা অন্য সব কাজ করার জন্য।’
শিক্ষকদের এই সুযোগকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে শহীদ ইকবাল বলেন, ‘কিছু লোক সব সময়ই থাকেন যাঁরা ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমাদের শিক্ষকদের মধ্যেও অনেকে আছেন যাঁরা শিক্ষার্থীদের এই সুযোগকে কাজে লাগান। অনেক সময় দেখা যায় ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০-২২ বা তার চেয়ে কম উপস্থিত আছে। তখন তাদের ক্লাস নেওয়া হয় না। এই যে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত আছে তাদের কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। ক্লাস যে সব সময় অ্যাকাডেমিক বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তা নয়। সে সময় শিক্ষকরা অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু তা তাঁরা করেন না।’
রাজনৈতিক অস্থিরতার এতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদ ইকবাল বলেন, ‘এসব কথা আগে প্রাসঙ্গিক ছিল। এখন এর কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই।’
তবে ক্যাম্পাস অনেকটাই ফাঁকা দেখে গাছতলায় বসা পুরোনো বই বিক্রেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন (হেসে), ‘ডাক নাম সম্রাট। মুকুটহীন সম্রাট।’ সম্রাট বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছে। ৩০-৩৫ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিদিনই এখন এক থেকে দেড় হাজার শিক্ষার্থী বাড়ি যাচ্ছে। আর এখানে থেকেই কী করবে? থাকলেই ঝামেলা! কখন পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তার ঠিক নাই। নিলেই ১০-১৫ হাজার টাকা। এসব কথা বললেও ঝামেলা।’