ভর্তিচ্ছুদের দেখার যেন কেউ নেই!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথমবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। খাবার হোটেল ও রিকশা ভাড়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই স্বাভাবিকের চেয়ে দু-তিন গুণ বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ক্যাম্পাসের ভেতরে অনেক খাবারের দোকান ও বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন খাবার হোটেলগুলোতে স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি অটোযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে তিন গুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এতে করে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাঁদের।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী হাসান বলেন, “আমি ঢাকা থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে রাজশাহীতে এসেছি। রেলস্টেশন থেকে অটোরিকশায় ক্যাম্পাসের বিনোদপুর গেটে আসি। রিকশা থেকে নামার পর অটোচালক আমার কাছ থেকে ৩০ টাকা ভাড়া নেন। ভাড়া এত বেশি কেন—জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, ভর্তি পরীক্ষা এলে আমাদের ‘ঈদ’ লাগে। তাই আমরা এ সময় ভাড়া একটু বেশি নিই।”
বিজয় নামের আরেক ভর্তিচ্ছু বলেন, ‘বিনোদপুরে একটি খাবার হোটেলে খাবার খাইতে যাই। সেখানে দুই প্লেট ভাত, ডাল ও এক টুকরা মাছের জন্য আমার কাছ থেকে ৮০ টাকা নেয়।’
ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নগরীতে ভর্তিচ্ছু ও তাঁদের অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। রিকশা ও অটোরিকশা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছেমতো। আবাসিক হোটেলগুলো দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। আর সব ধরনের খাবারের দোকানে নেওয়া হচ্ছে গলাকাটা দাম। কি ক্যাম্পাসে, কি ক্যাম্পাসের বাইরে—পুরো নগরীতে একই চিত্র। ব্যবসায়ীদের পকেট কাটার প্রতিযোগিতায় অতিষ্ঠ ভর্তিচ্ছুরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভর্তিচ্ছু ও তাঁদের অভিভাবকরা। তবে এর কোনো প্রতিকার নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মঈন উদ্দীন বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বরের খাবার দোকানে দুপুরের খাবার খেয়েছি। খাবারের মান একদম বাজে। অথচ তার বিনিময়ে দাম নেওয়া হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। ভর্তিচ্ছু নয় এমন পরিচয় জানার পর তাঁরা কিছু টাকা কম রেখেছে। আগে পাতলা ডালের জন্য টাকা নেওয়া হতো না। এখন সেটার জন্যও পাঁচ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এভাবে যে যার মতো দাম নিচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারের হাফিজুর রহমান নামের এক খাবার দোকানদার বলেন, ‘আমরা সারা বছর তেমন ব্যবসা করতে পারি না। ভর্তি পরীক্ষার সময় একটু ব্যবসা না করলে চলব কীভাবে। এ কয়দিন একটু বেশি সবাই নেয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ভেতরে কেউ যাতে খাবারের দাম বেশি না নিতে পারে, তার জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি খাবারের দাম নেওয়ার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ক্যাম্পাসের বাইরে কোনো কিছুর দাম বেশি নেওয়া হলে তার দায়ভার আমাদের নয়।’