‘রাতে গেঞ্জি ধুয়ে পরের দিন ওটাই পরে আসেন’
প্রস্তাবিত জাতীয় বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের অবমূল্যায়নের প্রতিবাদে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষক সমিতি। আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে এ অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেন শিক্ষকরা।
অবস্থান ধর্মঘটে রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা, সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক শাতিল সিরাজ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমান প্রমুখ।
এ সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল বেতন সপ্তম বেতন কাঠামো থেকেও কমিয়ে আনা হয়েছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ প্রস্তাবে সিলেকশন গ্রেড বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এভাবে অবমূল্যায়িত করার চেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক। অবিলম্বে এই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা না করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের তুলনায় সচিবসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মকর্তার বেতন, সম্মান বেশি দেওয়ায় ভবিষ্যতে মেধাবীরা ওই সব কর্মক্ষত্রকেই গুরুত্ব দেবে বলে মনে করেন রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের গুরুত্ব কম দেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব অযোগ্যরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে থাকবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান দিন দিন কমতে থাকবে।’ তাই প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোকে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়ার পাঁয়তারা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ধর্মঘটে অংশ নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্টের অফিসারদের আয় বাড়ানোর কথা কখনো বলা হয় না। কিন্তু আমাদের বলা হচ্ছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের আয় বাড়ানোর কথা। এ কাজ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে পারবে না।’
কাজী জাহিদুর রহমান আরো বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অনেক শিক্ষক আছেন যাঁদের ব্যবহারের জন্য গেঞ্জি একটি। রাতে ওই গেঞ্জি ধুয়ে পরের দিন আবার ওটাই পরে আসেন। আমরা ঈদে বাড়িতে গিয়ে ১০০/১২০ টাকা সালামি দেই। কিন্তু অন্য আত্মীয়স্বজনরা দেয় ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। তাই আমাদের অনেকে মনে করে আমরা কিপটেমি করি। আসলে আমরা কী করে বোঝাব, যে বেতন পাই তা দিয়ে আমরা ভালো করে চলতে পারি না।’
রাবি শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়ে আসছেন। এর মধ্যে রয়েছে অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা পদায়িত সচিবদের সমান করা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বেতন-ভাতা ও মর্যাদা মন্ত্রী পরিষদ সচিবের সমান করা, সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা সিনিয়র সচিবের সমান করা, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড অব্যাহত রাখা, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের বেতনকাঠামো ক্রমানুসারে নির্ধারণ করা, সরকারি কর্মকর্তাদের যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যও নিশ্চিত করা, স্বতন্ত্র পে স্কেল প্রবর্তন করা এবং ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেতন ও চাকুরি কমিশন ২০১৩-এর প্রতিবেদনে উদ্ধৃত ‘সরকারের অনুদানের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সম্পূর্ণ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো পরিবর্তন যুক্তি-যুক্ত হবে না’ অংশটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা।
প্রস্তাবিত অষ্টম জাতীয় বেতনকাঠামোকে প্রত্যাখ্যান করে নতুন কাঠামো পুনর্নির্ধারণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, আংশিক কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছে রাবি শিক্ষক সমিতি। কিন্তু কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না আসায় আজ পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করে তারা।
আগামীকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদে শিক্ষকদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঢাকাতে বৈঠক করবে। বৈঠক থেকে যে কর্মসূচি দেওয়া হবে সে অনুযায়ী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয় আজকের ধর্মঘট থেকে।