সেই মুর্শেদাসহ ২৪ ছাত্রী ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুর্শেদা খানমসহ ২৪ জন নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
আজ সোমবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, গত ১০ এপ্রিল, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।’
এরপর ২৪টি নাম দেওয়া আছে। যার প্রথম নামটি ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক খালেদা হোসেন মুনের। এর পরই আছে মুর্শেদা খানমের নাম।
এ ছাড়া যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাঁরা হলেন, সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকা হক স্বর্ণা ও মিরা, সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতী আক্তার সুমি, সহসম্পাদক শ্রাবণী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স বিভাগ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শারমিন আক্তার সুমি, ঢাবির চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আশা, সুদীপ্তা মণ্ডল ও অনামিকা দাশ, নাট্যকলা বিভাগের লিজা ও মিথিলা নুসরাত চৈতী, সংগীত বিভাগের সোনম সীথি, প্রিয়াংকা দে ও প্রভা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শারমিন সুলতানা, উর্দু বিভাগের মিতু, ভূতত্ত্ব বিভাগের শিলা ও জাকিয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মনিরা ও রুনা, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের জুঁই, বাংলা বিভাগের তানজিলা ও সমাজকল্যাণ বিভাগের তাজ।
ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হওয়া এই ২৪ জন কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। তাঁরা ১০ এপ্রিল রাতে সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।
সুফিয়া কামাল হল সূত্রে জানা যায়, ৮, ৯ ও ১০ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনে সুফিয়া কামাল হল থেকে তিন শতাধিক ছাত্রী অংশ নেন। ১০ এপ্রিল রাতে ওই হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা ও তাঁর অনুসারীরা অর্ধশতাধিক ছাত্রীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। এর মধ্যে ছাত্রলীগ নেত্রী মুর্শেদা খানমকেও মারধর ও রক্তাক্ত করে।
তবে ছাত্রলীগের দাবি, ১০ এপ্রিল রাতে এশা, মুর্শেদাসহ আরো কয়েকজন একই রুমে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন পাশে এক মেয়ের চিৎকারে উত্তেজিত হয়ে মুর্শেদা কাচের দরজায় লাথি দিলে তার পা কেটে যায়। মুর্শেদার কাটা পায়ের ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দাবি করা হয়, ছাত্রলীগ নেত্রী এশা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন।
এরপর ওই রাতেই সুফিয়া কামাল হলে এশার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগের একাংশসহ সাধারণ ছাত্রীরা। রগ কাটার গুজবে গভীর রাতেই বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে সুফিয়া কামাল হলের সামনে জড়ো হয়। তারা এশার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। বিক্ষোভের মুখে এশা উপস্থিত ছাত্রীদের উদ্দেশে হ্যান্ড মাইকে বলেন, ‘আমি ভুল করেছি।’
এরপর হলের প্রাধ্যক্ষ ও হাউস টিউটররা অনেক চেষ্টা করেও ছাত্রীদের শান্ত করতে পারেননি। বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা এশার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়।
এদিকে মুর্শেদার রক্তাক্ত ছবি ভাইরাল হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমাতে সেই রাতে এশাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আক্তারুজ্জামানও এশাকে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।
এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে ছাত্রলীগ। এরই মধ্যে এশার গলায় জুতার মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হয় এবং রগ কাটার বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ১৩ এপ্রিল এশার বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাঁকে স্বপদে বহাল করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা এশার গলায় একাধিক ফুলের মালা পরিয়ে দেন।