কেন্দ্রীয় সম্মেলন ঘিরে রাবি ছাত্রলীগ নেতারা যা বলছেন
আগামী ১১ ও ১২ মে অনুষ্ঠেয় ২৯তম সম্মেলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নতুন কমিটি গঠিত হবে। আর এ কমিটির শীর্ষ পদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) থেকে যোগ্য নেতাদের মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে রাবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মৌলবাদী ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হয়। এজন্য এখানকার ছাত্রনেতারা খুবই স্বচ্ছ ও তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী হয়ে থাকেন। অনেক ত্যাগ স্বীকারের পরও বরাবরই কেন্দ্রীয় কমিটিতে যথাযথ মূল্যায়নহীন থাকছেন তাঁরা। তাঁরা মনে করেন, এবারের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদগুলোতে রাবির যোগ্য নেতৃত্বকে মূল্যায়ন করা হলে ছাত্রলীগ আরো গতিশীল হবে।
ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাবি শাখা নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। প্রতিবারের মতো এবারও বিপুল নেতাকর্মী ছাত্রলীগের এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
রাবি শাখা ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের অন্য যেকোনো ক্যাম্পাসের তুলনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকা অত্যন্ত দুর্বহ। এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে শিবিরের আধিপত্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। রাজনীতিতে ‘ঢাকা কেন্দ্রিক’ মনোভাবের ফলে অনেক যোগ্য নেতা থাকা সত্ত্বেও এখানকার কাউকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয় না। এতে অনেক নেতাকর্মী হতাশ হয়ে রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছেন।
সাবেক নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রাবি ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী শিবিরের হামলার শিকার হয়েছেন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে জীবন যাপন করেছেন। এঁদের মধ্যে কয়েকজনকে বড়জোর বর্ধিত কমিটির সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সন্তোষজনক কোনো পদে মূল্যায়ন করা হয়নি।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান শিখরকে ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এরপর আর কাউকে কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই পদে মূল্যায়ন করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ঠান্ডু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য। আরেক সাবেক সভাপতি আওয়াল কবির জয় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ ছাড়া তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর দুই মেয়াদে প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেন এবং বর্তমানে শিক্ষক সমিতির সভাপতি। গত কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান রানাকে রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। এঁদের মতো আরো অনেক নেতা আছেন যাঁদের এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়নি।
রাবি ক্যাম্পাসে এক সময়ে শিবিরের হাতে নির্যাতিত ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান কমিটির সদস্য আখেরুজ্জামান তাকিম বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা ছাত্রলীগ করেন তাঁরা অনেক সাহসী হন। তাঁদের শিবিরের সঙ্গে মোকাবিলা করে এ ক্যাম্পাসে টিকে থাকতে হয়। কিন্তু ঢাকার ভেতর থেকে শীর্ষ পদগুলোতে নেতা হওয়ার কারণে কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখানকার কোনো নেতাকে মূল্যায়ন করা হয় না। ফলে এখানকার ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীই রাজনীতি করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদি ঢাকার বাইরে থেকে সেন্ট্রালে নেতৃত্ব আসে তাহলে রাজনীতির ক্ষেত্রে রাবিসহ সবজায়গার নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন পাবেন।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হোসাইন বিপু বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁদের মধ্যে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি করা একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। ছাত্র রাজনীতিতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করার পরও ঢাকা থেকে অনেক দূরে হওয়ার কারণে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদগুলোতে কোনো প্রকার মূল্যায়ন করা হয় না।
বিপু আরো বলেন, ‘যাঁরা কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়ার দায়িত্বে আছেন তাঁরা যদি এ বিষয়টি দেখেন তাহলে অনেক নেতাকর্মী রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়বে না। এ ছাড়া এ ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে গিয়ে যেসব নেতা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাঁদের মূল্যায়ন না করার কারণে পরবর্তী সময়ে তাঁরা আর দলের জন্য কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না।’