কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর আবারো হামলা
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/07/22/photo-1532272295.jpg)
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর আবারো হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। ওই সমাবেশেই হামলা হয়। সমাবেশ থেকে বুধবার বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকালে তিন দফা দাবি নিয়ে ছাত্র সমাবেশ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। প্রায় তিন ঘণ্টার এ সমাবেশের শেষের দিকে তাঁদের ওপর হামলা হয়।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির যুগ্মসম্পাদক দিদার মো. নিজামুল ইসলাম ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপসম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে অর্ধশত ছাত্রলীগ কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন বলে জানা যায়।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, সমাবেশ শেষে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বনি ইয়ামিন মোল্লা ও সোহরাব হোসেনকে কাঁটাবনের বাটা সিগন্যাল এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপসম্পাদক মুরাদ হায়দার টিপু, ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান উজ্জ্বল ও ঢাবির জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা।
তবে এ ব্যাপারে জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা জানান, ওই দুইজনকে মারধর করা হয়েছে, তুলে নেওয়া হয়নি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটকদের মুক্তি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আগামী বুধবার সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করার কর্মসূচি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সমাবেশে তিন দফা দাবি পেশ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক বনি আমিন মোল্লা। সমাবেশে বনি আমিন বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) চালানো হয়েছে। এসবের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। এ আন্দোলন যৌক্তিক। কিন্তু এখানে হামলা চালিয়ে ব্যক্তিগত বিরোধ তৈরি করা হচ্ছে। যেটি কোনোভাবে কাম্য নয়।’
সমাবেশে উপস্থিত হন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খাঁনের মা সালেহা বেগম। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার মানিক (রাশেদ) সাধারণ ছাত্র। সে সরকারের বিরুদ্ধে কোন সময় জড়িত ছিল না। রাজনৈতিক কোনো দল বা দেশের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রে জড়িত নয়। আমার মানিক, এমনকি আমরা কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। আমার মানিক শুধু চাকরির জন্য দাবি করেছিল, কোটা কমানোর জন্য আন্দোলন করছিল। ও তো কোনো অপরাধ করেনি। তারপরও ওকে এমনভাবে হয়রানি করা হচ্ছে কেন?’
সালেহা বেগম বলেন, ‘আমার আর চাকরি দরকার নেই। আমার মানিককে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা করে দিলে, আমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাব। ওকে আর কোনোদিন আন্দোলন করতে দেব না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পরের বাড়িতে কাজ করে আমার মানিককে লেখাপড়া শিখাইছি। ওর আব্বা লোকের জমিতে কামলা দিয়ে বহু কষ্টে সংসার চালিয়েছে। ওর আব্বার পেটে পাথর জমেছে।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘তাঁদেরকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁরা আমার অনুরোধ রাখেননি। তাঁদের এ সমাবেশের ফলে যানজট তৈরি হয়।’ তবে যারা হামলা করেছে তাঁদেরও বিচার করা হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মারধর ও হামলার ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়।’