ঢাবিতে ১৯ সমস্যার সমাধান চায় ছাত্রলীগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, আবাসিক হলের সংস্কার ও ইভটিজিং প্রতিরোধসহ ১৯টি সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এসব সমস্যা চিহ্নিত করে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী ওই সংগঠন।
এর আগে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব সমস্যা তুলে ধরে ছাত্রলীগ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায় ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। ৬৮ বছরের প্রাচীন এ সংগঠনটি অতীতের মতো আজও শিক্ষার্থীদের কিছু মৌলিক সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যা নিয়ে আজ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করব।’
এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে তিনি দাবিগুলো সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রাবাসগুলোর মানসম্মত খাবার পরিবেশন ও ক্যান্টিনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা এবং খাবারের মান অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগের শ্রেণিকক্ষগুলো যুগোপযোগী করা। যেমন : শিক্ষা সরঞ্জাম, ডিজিটাল বোর্ড স্থাপন, প্রজেক্টর ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা; ঢাবির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে স্বল্পমূল্যে এবং সহজ কিস্তিতে ‘ল্যাপটপ’ প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; প্রত্যেক ল্যাবরেটরিতে সর্বাধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি, সরবরাহ ও স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা; ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা এবং সুনির্দিষ্ট অভিযানের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ব্যবস্থা নেওয়া; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মোড়ে ডাস্টবিন স্থাপন করা এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা; আবাসিক হলগুলোতে নিয়মিত মশা ও ছারপোকা নিধন ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার যথাযত উন্নয়ন করা; ক্যাম্পাস ও প্রতিটি আবাসিক হলকে ওয়াই-ফাই জোনের আওতায় আনা; আবাসিক হলের গ্রন্থাগারকে আধুনিকীকরণ করা ও যুগোপযোগী পাঠ্যবই, মুক্তিযুদ্ধের ওপর রচিত বইয়ের সংগ্রহ বৃদ্ধি করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠগুলোকে নিয়মিত পরিচর্যা করা ও খেলার মাঠগুলোকে ভাড়া প্রদান বন্ধ নিশ্চিত করা এবং বিভিন্ন সময় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা; ক্যাম্পাসকে নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা ও ভূমিকা গ্রহণ করা এবং আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সিসি টিভি সংযুক্ত করা; ইভটিজিং প্রতিরোধে ‘যৌন নিপিড়নবিরোধী সেল’-এর ভূমিকা ত্বরান্বিত করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ও পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং মেয়েদের হলগুলোতে যাতায়াতের পর্যাপ্ত পরিবহনের ব্যবস্থা করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসার সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা; গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করা; বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে নিরাপত্তাজনিত কারণে ভাড়ায় চালিত বাস ও ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা ও ক্যাম্পাসের ভেতর অবৈধ স্থাপনা যেমন কার্জন হলের আশেপাশের নার্সারি, বিভিন্ন ধরনের দোকান উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা; ভূমিকম্প বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে যাতে বড় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে পুরাতন প্রত্যেক আবাসিক হলগুলো অতি দ্রুত সংস্কার করে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিপদমুক্ত করে বসবাসের উপযোগী করে তোলা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল ও বিভিন্ন স্থানের দূরত্ব অনুযায়ী যথাযথ রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া।
দাবিগুলো বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কয়েকটি সুপারিশও তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো ওই বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগ ও আবাসিক হলের শিক্ষক ও হল প্রাধ্যক্ষদের মাধ্যমে বিভিন্ন কমিটি ও উপকমিটি গঠন করা যেতে পারে। এবং উল্লিখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোকে কমিটিতে যুক্ত করা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বদ্ধপরিকর বলেও ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এ নেতা।