ঢাকার খরচে মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ও গবেষণায় মাস্টার্স করে মালয়েশিয়ার টেইলর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিষয়ে পিএইচডি করছেন হাফিজুর রহমান। উচ্চশিক্ষার জন্য ২০১৪ সালে তিনি মালয়েশিয়া যান। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশে এসে অনেক অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। সম্প্রতি হাফিজুর রহমান কথা বলেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে। মালয়েশিয়ায় পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য করণীয়সহ নানা বিষয়ে নিজের ভাবনার কথা বলেন তিনি।
হাফিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এশিয়ার ইউরোপ’ খ্যাত মালয়েশিয়ায় বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসছে। এঁদের বেশির ভাগই আসেন উচ্চশিক্ষার জন্য। বাংলাদেশ থেকেও অনেক শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় যান। তিনি বলেন, ‘সবাই মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে তাই আমিও যাচ্ছি, ব্যাপারটা এমন হওয়া উচিত নয়। কোনো দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়ার আগে অবশ্যই জেনে নিতে হবে সেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি কত, থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ কেমন, পার্ট-টাইম চাকরির কোনো সুযোগ আছে কি না ইত্যাদি। এ ছাড়া নিজের সামর্থ্যের কথাও ভাবতে হবে। এর পর হিসাব কষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
মালয়েশিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা ও উচ্চশিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে হাফিজুর রহমান বলেন, সরকারি ও উচ্চ মানের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া মালয়েশিয়ার প্রায় বেশির ভাগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজেই ভর্তি হওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আইইএলটিএসও প্রয়োজন হয় না। মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে টিউশন ফিও কম। মূলত এই কয়টি কারণেই বিশ্বের অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যান।
হাফিজুর রহমানের মতে, উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আগে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা ভালো। শিক্ষার্থীদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা গেলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। সেসব শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ ৫.০০ কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি ও বেরসকারি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি তাঁরা মালয়েশিয়ার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। ইউএম, আইআইইউএম, ইউপিএম, ইউআইটিএম, ইউইউএম, এমইডিআইইউ, টেইলর্স, সেগি, মাল্টিমিডিয়া, সানওয়ে, আইএনটিআই, নীলাই, আইআইসি, এফটিএমএস ইত্যাদিতে পড়তে আসতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে জেনে নিতে হবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ কেমন। যেমন- মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমইডিআইইউ ইত্যাদির খরচ বিষয় ও ক্রেডিট অনুসারে (শুধু টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া ও যাতায়াত খরচ বাদে) বছরে ৫ থেকে ১০ হাজার রিংগিত (এক লাখ ১০হাজার থেকে দুই ২০ হাজার টাকা), আবার টেইলর্স, সেগি, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদির খচর বছরে ২০ থেকে ২৫ হাজার রিংগিত (চার লাখ ৪০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা)।
হাফিজুর রহমান বলেন, বেশি খরচের বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসার পর পরবর্তী সেমিস্টারগুলোর টাকা জোগাড় করতে সমস্যা হলে সেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করতে পারবে, এ ক্ষেত্রে তাকে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত সময় (দুই-তিন মাস) হাতে থাকতে প্রস্তুতি নিতে হবে। তাহলে তাকে দেশে ফিরে যেতে হবে না। আর কেউ যদি অপছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজ পরিবর্তন করতে চায়, সেটাও তাকে করতে হবে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজে নিয়মিত থেকে এবং পর্যাপ্ত সময় আগে।
হাফিজুর রহমান বলেন, ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা ভালো হলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে। কিন্ত ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা মোটামুটি হলে তারা ইউইউএম, এমইডিআইইউ ইত্যাদি কম খরচের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে।
মালয়েশিয়ায় কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা ভালো নয় এমন শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করতে আসা ঠিক নয়। তবে বাংলাদেশ থেকে এমন অনেক শিক্ষার্থী আসে, পড়ার নামে কাজ করাই যাঁদের উদ্দেশ্যে। মালয়েশিয়ায় ফুল টাইম কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে এদের মধ্যে স্বল্প সংখ্যাক ভালো চাকরি পেলেও বাকিরা সবাই পুরোপুরি শ্রমিক।
দালালদের সহায়তায় নকল অথবা অন্যের সার্টিফিকেট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী পরিচয়ে এক শ্রেণীর মানুষ আসে। হাফিজুর রহমানের মতে, এই শিক্ষার্থী নামের শ্রমিকরা বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তিনি আরো বলেন, যাদের উদ্দেশ্য কাজ করে অর্থ উপার্জন করা, পড়াশোনা নয় তাদের উচিত কাজের ভিসা নিয়ে আসা।
নিজের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে হাফিজুর রহমান বলেন, তাঁর পিএইচডির বিষয় হলো, ‘The impact of the use of Skype Group Video Call technology in teaching English to the working people in Bangladesh’। স্কাইপ ভিডিও কলিং টেকনোলজি ব্যবহার করে তিনি এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার চেরাস থেকে পরিচালিত একটি অনলাইন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও ব্যস্ত চাকরিজীবী প্রফেশনালদের জন্য অনলাইনে ভালো শিক্ষকদের সহায়তায় ইংরেজি ও কম্পিউটারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করা। মালয়েশিয়ায় পড়াশোনাসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে হলে বাংলাদেশি শিক্ষাথীরা তাঁকে মেইল করতে পারেন hafizbd02@gmail.com এই ঠিকানায়।