৭ দিনে জাবিতে ২০টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/01/18/photo-1453108073.jpg)
অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় গ্রেড সমস্যা নিরসন ও অসঙ্গতি দূর করার দাবিতে চলছে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি। গত ১১ জানুয়ারি থেকে চলমান এই কর্মবিরতির কারণে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস-পরীক্ষা।
শিক্ষকদের কর্মসূচির কারণে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষাসহ অন্যান্য শ্রেণি কার্যক্রম। আন্দোলনের প্রথম সাতদিনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ২০টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গত ১১ জানুয়ারি, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বিভাগের তিনটি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হলো আইআইটির তৃতীয় বর্ষের ৩২০৩ নম্বর কোর্স, বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২০১ নম্বর কোর্স এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ১০২ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা।
পরদিন ১২ জানুয়ারি, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবস থাকায় সেদিন কোনো পরীক্ষা ছিল না।
১৩ জানুয়ারি, বুধবার বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৪০৬ নম্বর কোর্স, অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ৩০৮ নম্বর কোর্স এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২১০৫ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা স্থগিত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। ১৪ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার স্থগিত হয়েছে তিন বিভাগের তিনটি কোর্সের পরীক্ষা। পরীক্ষাগুলো হলো ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ২০১ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের ১০২ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা এবং পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের ১০১ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা।
এরপর ১৬ জানুয়ারি, শনিবার স্থগিত করা হয়েছে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ৫০১ নম্বর কোর্স ও পিএইচডির ৬০১ নম্বর কোর্স, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এমফিলের ৬০১ নম্বর কোর্স ও পিএইচডির ৭০১ নম্বর কোর্স এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২১০৬ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা। ১৭ জানুয়ারি, রোববার বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৪০৭ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া আজ সোমবার স্থগিত করা হয়েছে পাঁচটি পরীক্ষা, যার মধ্যে রয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম বর্ষের ১০২ নম্বর কোর্স, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) দ্বিতীয় বর্ষের ২০২ নম্বর কোর্স, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ১০৩ নম্বর কোর্স ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের ১০৩ নম্বর কোর্স এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের পিএইচডির ৬০১ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা।
এসব পরীক্ষা স্থগিতের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সিদ্দিকুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘১১ তারিখে শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরুর পর থেকে কোনো বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। যে যে বিভাগে পরীক্ষা থাকে, পরীক্ষার দিন সকালে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে ওই দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। এটা সম্পূর্ণ সংশ্লিষ্ট বিভাগের এখতিয়ার।’
এদিকে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ভয়াবহ সেশনজটের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এমনিতেই কয়েক মাসের সেশনজটে পড়ে গেছি, এখন একের পর এক ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় তা আরো বাড়বে দেখছি। আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে শুনছি যে, শিক্ষকরা বলছেন আমাদের (শিক্ষার্থী) ক্ষতি নাকি তাঁরা পুষিয়ে দেবেন। ক্লাসের ক্ষতি না হয় অতিরিক্ত সময়ে ক্লাস নিয়ে পুষিয়ে দেবেন, কিন্তু যথাসময়ে ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে দেবেন? একের পর এক পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়া মানেই তো সেশনজট তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়া।’
এদিকে চলমান কর্মবিরতির সার্বিক অবস্থা এবং এর সম্ভাব্য সমাধান প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অগ্রগতি বলতে মূলত গতকাল শিক্ষাসচিবের কাছে আমরা আমাদের লিখিত প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি। দাবি আদায়ে আমাদের যে অবস্থান, এ থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ আর নেই। তবে ফেডারেশন নেতাদের চায়ের দাওয়াত দেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সেখানে এ নিয়ে আলোচনা হলে কোনো সমাধান আসতে পারে বলে আশা করছি।’
ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এ ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মাফরুহী বলেন, ‘আসলে কোনো ক্ষতিই পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি উপায় বের করে আমরা তা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করব।’