টিএসসির হরেক রকম চা
অলস দুপুরে,ব্যস্ত বিকেলে কিংবা শীতের কুয়াশামাখা সন্ধ্যায় গরম এক কাপ চায়ের কোনো বিকল্প হতে পারে না। চা-প্রেমীদের কাছে ‘চা’ একটি ভালোবাসার নাম! ঢাকার অলি-গলি,হোটেল-রেস্তোরা – সর্বত্র চা পাওয়া গেলেও কিছু দোকানের চা আছে যাদের চা না খেলে জীবন বৃথা!
ঠিক তেমনি ঢাকায় চায়ের জন্য বিখ্যাত স্থান হল টিএসসি। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আড্ডা দিতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে এই স্থানে্। বিশেষ করে বিকেল বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চা-প্রেমীদের উপস্থিতি এই স্থানটিকে উৎসবমুখর করে তোলে। বন্ধুদের সাথে আড্ডার মাঝে কিংবা কারো সাথে কথা বলার সময় এক কাপ চা হলে আড্ডা যেন আরও জমে ওঠে। চায়ের কাপ সাধারণত চা পাতা এবং দুধের ঘ্রাণেই ভরপুর থাকে। কিন্তু বর্তমানে চায়ের পাতার সঙ্গে ছোঁয়া লেগেছে বিভিন্ন ফলের, ভেষজ পাতার, মসলার এবং মরিচের!
দুধ চা, রং চা তো সবখানেই কম-বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু চায়ের যে কত প্রকারভেদ হতে পারে তা টিএসসিতে না আসলে হয়তো বোঝা যায় না।
চায়ের প্রকারভেদ
টিএসসিতে প্রায় ৪০ রকম চা পাওয়া যায় । এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল মরিচ চা, পনির চা, কাচা আমের ঝাল চা, মালাই চা,দুধ চা,মাল্টা চা।
রং চা, দুধ চা তো আছেই। সাথে আরো আছে মাল্টা চা, কমলা চা, জলপাই চা, বর্ন ভিটা চা, মালাই চা, পনির দুধ চা, মরিচ চা, আপেল চা, চেরি চা, গুড়ের চা, কাচা আমের ঝাল চা, আদা দুধ চা, আমলকির ঝাল চা, ব্যানানা চা, স্ট্রবেরি দুধ চা, আলু বোখরা ঝাল চা, অপরাজিতা চা, জেসমিন চাসহ আরও নানা ধরনের চা।
দোকানদারদের ভাষ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর বহিরাগত সকল চা প্রেমীদের কথা মাথায় রেখেই চা বিক্রেতাদের নতুন এসব উদ্ভাবন।
দরদাম
চা ভেদে একেকটির দাম একেক রকম।
মরিচ চা
মরিচ চায়ের সাথে একটু পরিচিত হওয়া যাক। আমরা সবাই জানি, চায়ের অন্যতম একটি উপাদান হলো চিনি। তবে অনেকেই শারীরিক জটিলতাসহ নানা কারণে চিনি ছাড়াও চা খেয়ে থাকেন। ঝাল শব্দটা শুনেই বোঝা যায় এই চায়ের প্রধান উপাদান হলো মরিচ। আরো উপকরণের মধ্যে রয়েছে তেঁতুলের রস, বিট লবণ, চিনি, চায়ের লিকার আর অবশ্যই কাঁচামরিচ। প্রথমেই চুলায় পানি গরম করে তাতে চা পাতা দিয়ে রং চায়ের লিকার তৈরি করা হয়। এরপর তা কাপে নিয়ে দেড় থেকে দু চামচ চিনি, সামান্য বিট-লবণ যোগ করা হয়। এরপর কাচামরিচ কুচি করে তাতে দেওয়া হয়। আর সবশেষে স্বাদে একটু ভিন্নমাত্রা আনতে যোগ করা হয় তেতুলের রস। ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী ঝালের মাত্রা কমবেশি করা হয়। প্রতি কাপ চায়ের দাম দশ টাকা।
অপরাজিতা চা
অনেকেই শুনে অবাক হবেন যে, চা পাতা ছাড়াও চা বানানো সম্ভব।
টিএসসির চা দোকানদার সাকিবের ভাষ্যমতে, প্রথমেই চুলায় পানি গরম করে তাতে অপরাজিতা ফুল দেওয়া হয়। এরপর আস্তে আস্তে নীল বর্ণ ধারণ করে সেই পানি। এরপর পরিমাণমতো চিনি, লেবু দেওয়া হয় তাতে। এই তো, প্রস্তুত হয়ে গেলো লিকারমুক্ত 'অপরাজিতা চা'।
টিএসসির চা দোকানি শাহবুদ্দিনের হাত ধরে ঢাকার বুকে নেমে এসেছিল ‘অপরাজিতা চা'।
টিএসসির আরেক দোকানদার আব্দুল মান্নান গাজী বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে শুরু করে রাত ১১ টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখেন তিনি। শুক্রবারে চায়ের চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। কারণ ছুটির দিন হওয়ায় বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ ঘুরতে আসেন এই এলাকায়, এবং আড্ডা দেন টিএসসিতে।
টিএসসিতে চা খেতে আসা জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আ হ ম সাক্ষর রহমান বলেন, চায়ের ভিন্ন ভিন্ন ধরণ আমরা এখানে দেখতে পেলেও, সেগুলো আসলে প্রতিদিন খাওয়ার মতো নয়। তবে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ঠিকাছে। বাইরে থেকে অনেক মানুষ শুধুমাত্র ভিন্ন ধরনের চা টেস্ট করবে বলেই এখানে আসেন।
আগে দোকানগুলোর সামনে অনেক বেঞ্চ ছিল, কিন্তু তা এখন উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাই অনেক সময় জায়গা না পেলে দাঁড়িয়েই চা খেতে হয় বলেও অভিযোগ করেন এ শিক্ষার্থী।
আরেক শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তানিশা হক জানান, প্রায় প্রতিদিনই ক্লাস শেষে বা ক্লাসের মাঝের বিরতিতে বন্ধুদের সাথে টিএসসি এলেই সকলে মিলে একসাথে চা খেতে খেতে আড্ডা দেই এখানে। সাধারণ দুধ চা বা রঙ চার বাইরেও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের চা টেস্ট করার সুযোগ রয়েছে এখানে। যা নিঃসন্দেহে অসাধারণ একটি ব্যপার।
সকাল থেকে রাত অবদি চলে টিএসসির আড্ডা সাথে চলতে থাকে চায়ের অর্ডার।