মেডিকেলে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ

মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি, দ্বিতীয় মাইগ্রেশনসহ একাধিক বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। আজ বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুপুরের পর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মাহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. রুবীনা ইয়াসমিন গতকাল বুধবার (১৯ মার্চ) গণমাধ্যমকে জানান, মেডিকেল ভর্তি নিয়ে আগামীকাল আমাদের একটি সভা রয়েছে। সভায় একাধিক বিষয়ে আলোচনা হবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিয়েও আলোচনা হবে। তবে তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নেবে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় গত ১৯ জানুয়ারি। ফলাফলে দেখা যায়, পাসের হার ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। যেখানে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য ৫ হাজার ৩৭২ পরীক্ষার্থী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্য নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রয়েছে। এ ছাড়া পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্যও রয়েছে কোটা।
২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মোট আবেদন করেন এক লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৫ জন। এর মধ্যে এক লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ জন পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। আর সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে উত্তীর্ণ হয় ৬০ হাজার ৯৫ জন।
ফলাফলে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬৮৬ জনের মধ্যে পাস করেছেন ১৯৩ জন। তাদের জন্য বরাদ্দ আসন ৫ শতাংশ বা ২৬৯টি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ৯৪৬ জনের মধ্যে ২৮২ জন পাস করেছেন। তাদের জন্য ৩১টি আসন বরাদ্দ। সমতলের উপজাতি ২৫৫ জনের মধ্যে ৬৬ জন পাস করেছেন। তাদের জন্য আটটি আসন বরাদ্দ।
তবে এ ফলাফল প্রকাশের পর কোটা বিলুপ্ত করতে মাঠে নামে ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা প্রকাশিত এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে আবারও প্রকাশের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
দাবির মুখে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নীতিমালায় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তান কোটা এবং পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর কোটায় নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে অনুমোদনক্রমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ ও ২৬ জানুয়ারি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর কোটার প্রার্থীদের এবং ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানের জন্য সংরক্ষিত আসনে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের কোটার সপক্ষে সনদ বা প্রমাণসহ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে (মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরোনো ভবনের দ্বিতীয় তলা) উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। যাচাই–বাছাইয়ে দাখিল করা তথ্য মিথ্যা বা ভুল প্রমাণিত হলে প্রাথমিক নির্বাচন বাতিল বলে গণ্য হবে বলে জানানো হয়।
এ ছাড়া এই যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কোটায় উত্তীর্ণ ১৯৩ জনের ভর্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তবে বাকিদের ভর্তিসহ মেডিকেল কলেজের অন্যান্য কার্যক্রম চালু থাকবে।
এরপর ৩০ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমিনের সই করা আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার (বীরাঙ্গনা) সন্তান কোটায় আবেদনকারীদের ৪৯ জন আসেনি। তাদের আবার ২ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন। অন্যথায় তারা কোটার দাবিদার নন বলে গণ্য হবে বলে জানান।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারি মেডিকেলে ভর্তির দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবারই দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের বিষয়েও আলোচনা করা হবে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মেডিকেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ ছাড়া ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের বিষয়েও আলোচনা করা হবে।