এমন নির্বাচন কমিশনই চেয়েছি, শোকজের জবাব শেষে শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমান সশরীরে উপস্থিত হয়ে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে শোকজের জবাব দিয়েছেন। আজ রোববার (৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কমিশনের অনুসন্ধান কমিটির নারায়ণগঞ্জ জেলা যুগ্ম ও দায়রা জজ ইয়াসিন হাবিবের কাছে উপস্থিত হয়ে শোকজের জবাব তিনি।
শোকজের জবাব দিয়ে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন শামীম ওসমান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করেছে, তারা সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন করতে সক্ষম। যারা নির্বাচন বানচাল করতে অগ্নিসংযোগ করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাই। যেহেতু পুলিশ নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে, তারা যেন মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে পারে। আমরা এমনই নির্বাচন কমিশন চেয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন সক্ষম।’
শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জ্বালাও-পোড়াও করছে। মানুষকে হত্যা করছে। ধ্বংসযজ্ঞ করছে। সেটার প্রতিবাদে আমাদের নেতাকর্মীরা পাড়া-মহল্লায় শান্তিমিছিল করেছে। নৌকা হলো শান্তির প্রতীক। আমরা অন্য সময়ের মিছিলেও নৌকার স্লোগান দিই। সে কারণেই হয়ত দিয়েছে।’
ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত এই প্রার্থী আরও বলেন, ‘অনেকের মুখে চুনকালি দিয়ে নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করেছে, তারা স্বাধীন। অনেকে দেশে বিদেশে নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন করে। আমি এত নির্বাচন করেছি, কখনও দেখিনি পত্রিকার খবরে প্রার্থীকে তলব করা হয়, যে মিছিলে আমি ছিলামও না।’
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে অতি উৎসাহী হয়ে ভোট চেয়ে মিছিল করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীর পক্ষে মিছিল-সমাবেশে করায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে পাড়ায়-পাড়ায় মিছিল করতে দেখা গেছে।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর শামীম ওসমানের নির্বাচনি এলাকা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মিছিল করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এসব মিছিলে শামীম ওসমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে স্লোগান দেওয়া হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সানারপাড় এলাকায় মহানগর শ্রমিক লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লার নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক লোকজনের একটি মিছিল হয়। ওই মিছিলে ব্যবহৃত ব্যনারটিতে ‘শান্তি মিছিল’ লেখার পাশাপাশি ‘৭ জানুয়ারি শুভ দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’ উল্লেখ ছিল। ব্যানারে শামীম ওসমানেরও বড় করে ছবি সাঁটানো ছিল।
সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নম্বর ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল হয়। ওই মিছিলেও শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। মিছিল পূর্বে নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের একেএম শামীম ওসমান সাহেবের ভোটের প্রচারণায় আমরা মিছিল করব।
ফতুল্লা বাজার এলাকায় ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলীর নেতৃত্বে এবং কায়েমপুর এলাকায় থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল ইসলামের নেতৃত্বে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই দুই মিছিলেও নৌকা মার্কার পক্ষে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া তল্লা এলাকায় যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লবের নেতৃত্বে শামীম ওসমানের পক্ষে মিছিল করেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। কুতুবপুরে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মীর হোসেন ওরফে মীরুর নেতৃত্বে মিছিল হয়। মীর হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও চাঁদাবাজি বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
কাশীপুর ইউনিয়নে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদলের চেলে নাজমুল হোসেন সাজনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মিছিল করেন। তারাও মিছিলে শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে স্লোগান দেন। তাদের ব্যানারে ‘৭ তারিখ সারাদিন, উন্নয়নের শপথ নিন’, ‘এ কে এম শামীম ওসমানের সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’ উল্লেখ ছিল।
এদিকে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কজুড়ে শামীম ওসমানের হাত উঁচিয়ে ধরা বড় কয়েকটি ছবি সম্বলিত ফেস্টুন দেখা গেছে। শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে কয়েকটি ব্যানার ও ফেস্টুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, সানারপাড় ও চিটাগাং রোড এলাকায় সাঁটানো হয়েছিল। তবে, বিকেলের পর ওইসব ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে নেওয়া হয়।