প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব জমার শেষ দিন ৭ ফেব্রুয়ারি, দলের ৭ এপ্রিল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীকে ব্যয়ের হিসাব দাখিলের জন্য আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ ছাড়া ভোটে অংশগ্রহণকারী ২৮টি দলকেও হিসাব দিতে। সেই হিসাব জমা দিতে হবে ৭ এপ্রিলের মধ্যে। এ সময়ের মধ্যে প্রার্থী বা দল ব্যয়ের হিসেবে দিতে ব্যর্থ হলে প্রার্থীদের জেল জরিমানা ও দলের নিবন্ধন বাতিলের ব্যবস্থা নিতে পারবে ইসি।
সম্প্রতি ইসির উপসচিব মো.আতিয়ার রহমান এ সংক্রান্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) এমন বিধান সম্প্রতি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে তা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করার নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীকে ও ৯০ দিনের মধ্যে দলগুলোকে ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী মধ্যে এক হাজার ৯৫৯ জন প্রার্থীকে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যে নির্বাচনি ব্যয়ের হিসেব দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া যে আসনগুলোর নির্বাচন এখনও হয়নি কিংবা কোনো কারণে স্থগিত আছে, সেগুলো সম্পূর্ণ হওয়ার পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ওই সব প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব কমিশনে দাখিল করতে হবে। ভোটে যে দলগুলো প্রার্থী দিয়েছে, সেসব দলগুলোকে ৯০ দিনের মধ্যে দলের ব্যয়ের হিসেব দাখিল করার বিধান রয়েছে।
ইসিসূত্র বলছে, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রে অনিয়মের কারণে ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফলাফল স্থগিত করেছে ইসি। বাকি ২৯৮টি আসনের বিজয়ীদের গেজেট ৯ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। তাই আইন অনুযায়ী, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ২৯৮ আসনের সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে এবং ৭ এপ্রিলের মধ্যে সকল প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে নির্বাচিত ব্যয়ের বিবরণী জমা দিতে হবে।
এবারের নির্বাচনে ভোটার প্রতি প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয় ১০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইসি। তবে, ভোটার সংখ্যা যাই হোক না কেন মোট ব্যয় ২৫ লাখ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, যে দল থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবে, সে দল সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে।
৫১ থেকে ১০০ জন প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা, ১০১ থেকে ২০০ প্রার্থীর জন্য তিন কোটি টাকা এবং ২০০ এর বেশি প্রার্থী দিলে সংশ্লিষ্ট দল সর্বোচ্চ সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ ছিল। এই হিসেবে এবার সর্বোচ্চ ব্যয়ের সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ আওয়াম লীগ ও জাতীয় পার্টি।
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, এবার ২৮টি দল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে ৪৩৭জন। সবমিলিয়ে ২৯৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এক হাজার ৯৬৯ জন। দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি ২৬৪ জন, দ্বিতীয় স্থানে আওয়ামী লীগ ২৬৫ জন। দল দু'টি সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে। তৃণমূল বিএনপি ১৩৫ জন ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন প্রার্থী দিয়েছে। এই দল দু'টি সর্বোচ্চ তিন কোটি টাকা করে ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে।
অন্যদিকে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের ৬৬ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ জন প্রার্থী দিয়েছে। এই পাঁচটি দলের প্রতিটি সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে।
অন্যান্য দলের মধ্যে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১০ জন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এম.এল) ৪ জন প্রার্থী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৬ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১১ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ৫ জন, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের ৩৭ জন, ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯ জন, ইসলামি ঐক্যজোটের ৪২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৩০ জন, গণফোরামের ৯ জন, গণফ্রন্টের ২১ জন, জাকের পার্টির ২১ জন, জাতীয় পার্টি-জেপির ১৩ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ৩৮ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের ৪৫ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ৪ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ২৬ জন প্রার্থী রয়েছে। এই ১৮টি দলের প্রতিটি সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করার সুযোগ পেয়েছে।
আরপিও অনুযায়ী, প্রার্থী প্রতি দল সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা ব্যয় করতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাচনি প্রচারে দলীয় প্রধানের ভ্রমণ ব্যয় এতে যোগ হবে না। নির্বাচনি প্রচার, পোস্টার প্রভৃতি খাতে ব্যয় করতে পারে দলগুলো। আর চাঁদা ও অনুদান অন্যান্য খাত থেকে আয় করতে পারে। তহবিলের জন্য দল ২০ হাজার অধিক দান, চেক ব্যতীত গ্রহণ করতে পারবে না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৪৪ সিসিসি-বিধি অনুযায়ী, ভোটের ফলাফল গেজেটে আকারে প্রকাশের পর ৯০ দিনের মধ্যে দলগুলোর নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনের জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এটা অমান্য করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, এমনকি দলের নিবন্ধনও বাতিল করতে পারে ইসি।