কেরাণীগঞ্জ উপজেলায় আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ
কেরাণীগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগেরই আরেক নেতা। এই উপজেলায় অন্য কোনো রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেখা যায়নি কাউকে। অনেকের দাবি, দুই এলাকার দুই সংসদ সদস্যের আস্থাভাজনরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাদের সমর্থনে দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে হচ্ছে ভোটের লড়াই।
এলাকাবাসীর দাবি, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার সমর্থিত প্রার্থী দিয়েছেন কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বিপ্লবকে । আর ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপু সমর্থন দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ শাহীনকে । তাই এলাকাবাসী বলছেন এবারের উপজেলা নির্বাচনে হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই ।
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে ১ম ধাপে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ উপজেলায় ভোট গ্রহন হবে ৮ মে। নির্বাচনে দুই জন চেয়ারম্যান, তিন জন ভাইস চেয়ারম্যান ও দুই জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই উপজেলায় যারা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের 'লোক'। চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি টানা তিনবার কেরাণীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে ও সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখায় দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন 'দেশসেরা উপজেলা চেয়ারম্যান'। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করেছেন সেরা হওয়ার সনদ ও সম্মাননা।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদের অপর প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপ্লব। তিনি কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আলতাফ হোসেন বিপ্লবের রয়েছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইতিহাস। বর্তমানে তিনি কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অনেকের মতো তিনিও সেদিন বোমার আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছেন। তার পায়ে ২০ টির বেশি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছিল। যেগুলোর বেশিরভাগ এখনো শরীর থেকে বের করা যায়নি। কেরাণীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের আহ্বায়ক মনির হোসেন। তার প্রতীক তালা। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপ্লবের সঙ্গে 'জোট' বেঁধে নির্বাচন করছেন।
এছাড়াও রয়েছেন শাক্তা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন লিটন (মাইক প্রতীক)। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন আহমেদের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করছেন। এই পদে আরও নির্বাচন করছেন দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদ ইকবাল (টিউবওয়েল)।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আসমা আক্তার (কলস)। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন আহমেদের প্যানেলে জোট বেঁধেছেন। এছাড়া আরও রয়েছেন মডেল থানা যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি শান্তি আক্তার (সেলাই মেশিন)।
উম্মুক্ত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। নির্বাচন ঘিরে দুই প্যানেলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘কেরাণীগঞ্জের মানুষ পরিবর্তনের অপেক্ষায়। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক বলেছেন কেরাণীগঞ্জের নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখবেন। সিল মেরে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন আহমেদ বলেন, ‘কেরাণীগঞ্জে তিন বার উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি। এমন কোনো এলাকা নেই যে উন্নয়ন করা হয়নি। আমি আশা করি কেরাণীগঞ্জের জনগণ আমাকে পুনরায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।’
কেরাণীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্যে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।’
দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন।’
কেরানীগঞ্জ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৪ হাজার ৯২৯ জন। পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ১০ হাজার ৪৭৪ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৫৫ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২২৫টি।
ঢাকা জেলা নির্বাচন অফিসার ও রির্টানিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কেরাণীগঞ্জ উপজেলায় সাত জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে। নির্বাচনের আচারণ বিধি সংক্রান্ত সকল বিষয় প্রার্থীদের অবহিত করা হয়েছে। একজন প্রার্থী তার নিজ এলাকায় রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করতে পারবেন। প্রচার-প্রচারণায় গণসংযোগের কাজ করতে হলে সাথে পাঁচ জনের বেশি নেওয়া যাবে না। নির্বাচনী প্রার্থীরা প্রতি ওয়ার্ডে প্রতি ইউনিয়নের একটি করে নির্বাচনি অফিস ব্যবহার করতে পারবেন। নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা শেষ হবে আগামী ৬ মে রাত ১২টায়। এ সময়ের মধ্যে প্রত্যেক প্রার্থী তার প্রচার-প্রচারণা সম্পন্ন করতে হবে। এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।