নাম তাঁর তপন সিংহ
তোমরা কি তপন সিংহের নাম শুনেছ? তিনি ছিলেন ভারতের একজন প্রথম সারির চলচ্চিত্র পরিচালক। সিনেমার জগতে তাঁর জীবন শুরু হয়েছিল শব্দযন্ত্রীরূপে। দেশে-বিদেশে নানা সম্মান লাভ করেছে তাঁর অনেক ছবি। বাংলা, হিন্দি ও উড়িষ্যা ভাষায় প্রায় ৪০টির মতো ছবি বানিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে অনেক ছবি কিন্তু ছোটদের জন্য বানানো। ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তপন সিংহ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত গল্প নিয়ে ১৯৫৭ সালে তপন সিংহ তৈরি করেন ‘কাবুলিওয়ালা’। এই ছবি তোমরা দেখেছ কি? যেখানে ছোট্ট মেয়ে মিনির সঙ্গে ভাব হয়ে গেল দূর আফগান দেশ থেকে সওদা করতে আসা রহমত কাবুলিওয়ালার। ছোট্ট মিনির ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’ গানের সঙ্গে নাচ দেখলে রহমতের মতো তুমিও তাকে ভালোবেসে ফেলবেই! রহমত কাবুলিওয়ালার সঙ্গে বড় হয়ে যাওয়ার পরও মিনির ভাব ছিল কি? ছবিটা বরং নিজে দেখে জেনে নিলে কেমন হয়?
১৯৬৫ সালে তৈরি হয় ‘অতিথি’। সেটাও কিন্তু কবিগুরুর লেখা গল্প। এ সেই আপনভোলা ছেলে তারাপদর গল্প, যাকে মায়ের স্নেহ বা বন্ধুর ভালোবাসা, কোনো কিছুই বেশি দিন এক জায়গায় বেঁধে রাখতে পারে না। তাই বাঁশির সুরে, সব ভুলে, দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ায় তারাপদ।
১৯৭৪ সালে তপন সিংহ তৈরি করেন ছোটদের জন্য হিন্দি ছবি ‘সফেদ হাতি’। এই ছবিটির গল্প লিখেছিলেন তিনি নিজে। সে এক আশ্চর্য সুন্দর ছবি! গ্রামের ছোট্ট ছেলে শিবুর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় জঙ্গলের হাতিদের রাজা, ধপধপে সাদা হাতি ঐরাবতের। ঐরাবত শিবুকে সোনার মোহরের সন্ধান দেয়। শিবুর কুটিল কাকিমা সবকিছু জানতে পারে। তারপর একদিন এক মহারাজা জঙ্গলে শিকার করতে এলে লোভী কাকা-কাকিমা তাকে গিয়ে সাদা হাতির কথা বলে দেয়। মহারাজা তখন শিবুকে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। তাই দেখে বন্ধু ঐরাবত নিজে থেকে রাজার হাতে ধরা দেয়। এই অব্দি পড়ে কি মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল? আগে শেষটুকু তো শোন! ঐরাবতকে ধরা দিতে দেখে শিবুর বন্ধু ময়না পাখি জঙ্গলের অন্য সব পশুপাখিকে ডেকে আনে। জঙ্গলের যত হাতি, বাঘ, সাপ আর পাখি মিলে রাজা আর তার সঙ্গীদের ভয় দেখিয়ে ঐরাবতকে জঙ্গলে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
ছোটদের জন্য তৈরি করা তাঁর অন্যান্য ছবি হলো—‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ (১৯৭৯), ‘আজ কা রবিনহুড’ (১৯৮৭/হিন্দি), ‘আজব গাঁয়ের আজব কথা’ (১৯৯৯) আর ‘অনোখা মোতি’ (২০০০/হিন্দি)। তবে তাঁর আরো বেশ কয়েকটি ছবি আছে, যেগুলো বড়দের সঙ্গে ছোটরাও দেখে মজা পাবে, যেমন—‘এক যে ছিল দেশ’ (১৯৭৭)। এই ছবিতে এক তরুণ বৈজ্ঞানিক এমন এক ওষুধ আবিষ্কার করেন যে তার এক ফোঁটা পেটে গেলেই সবাই সত্যি কথা বলতে শুরু করবে। তার ফলে হলো কি? যত কালোবাজারি আর মিথ্যাবাদী নেতা, সব সত্যি কথা বলে ফেলতে শুরু করল আর বেঁধে গেল নানা গণ্ডগোল। ১৯৬৬ সালের ‘গল্প হলেও সত্যি’ এ রকম আরেকটা মজার ছবি। এক বড়সড় ঝগড়াটে পরিবারে, একদিন ভোরবেলা রাঁধুনি হয়ে এলো এক অদ্ভুত মজার মানুষ। সে এমন এমন কাণ্ড ঘটাতে লাগল যে সেই পরিবারের লোকজন সব ঝগড়া করতে ভুলে গেল!
তপন সিংহের বেশির ভাগ ছবির মধ্যেই থাকত কোনো না কোনো সামাজিক ঘটনার দিকে আলোকপাত। তাঁর অনেক ছবির গল্পই কিন্তু জীবন থেকে নেওয়া সত্যি ঘটনার আদলে তৈরি। সেইসব ছবি তোমরা বড় হলে নিশ্চয়ই দেখবে। কিন্তু আপাতত বাবা-মাকে বলে দেখত, যদি জোগাড় করতে পারো ‘সফেদ হাতি’ বা ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’র একটা কপি! তাহলে দেখে ফেলতে পারো এইসব দারুণ ছবি। সেইসঙ্গে একটু একটু করে চিনে নিতে পারবে সেই বিশেষ মানুষটিকে, যাঁর নাম তপন সিংহ।